শুভপম সাহা: তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় একটা। শনিবারের এক বারবেলা বলাই চলে। সল্টলেক সাই রিজিওনাল সেন্টার স্পোর্টস সায়েন্স বিল্ডিংয়ের অডিটোরিয়ামে, ধীরে ধীরে বেশ কিছু মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। আচমকাই নজর কাড়লেন ৬৪ বছরের এক ‘যুবক’! নাম-নরেশ কুমার গুপ্তা। আকর্ষণীয় বেশভূষা। পরনে সাদা রাউন্ড নেক টি-শার্ট, বুকে জ্বলজ্বল করছে ‘ফিট ইন্ডিয়া’র লোগো। গলায় তেরঙা স্কার্ফ, মাথার টুপিতেও জাতীয় আবেগ সঙ্গে পতাকা। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত ফিটনেস ও পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা খোদাই করা বন্ধনীতে রেখেছেন নিজেকে। সঙ্গে জুড়েছেন একাধিক গেরুয়া-সাদা-সবুজ ধ্বজা। নরেশ সিনিয়র সিটিজেন ঠিকই, তবে উত্তর কলকাতার মানিকতলানিবাসী মনেপ্রাণে একেবারে তরতাজা যুবক।
নজরকাড়া নরেশ
আলাপচারিতায় জানা গেল যে, মানিকতলা থেকে সাইকেল চালিয়েই এদিন চলে এসেছেন সল্টলেক সাই-তে! একসময়ে কারখানায় কাজ করতেন। অবসর নেওয়ার পর দু’চাকাই তাঁকে দিয়েছে পরিচয়। সাইকেল নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিয়ে চলেছেন নরেশ। কোভিড লকডাউনের পর দু’চাকায় চেপে মুম্বইয়ে গিয়ে হেমা মালিনী এবং আরও অনেক সিনেতারকার সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। তাঁদের থেকে পেয়েছেন ফিটনেসের প্রশংসাও। গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘এমনই ফিট যে, এই বয়সেও ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না আমাকে।’ কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্যরেরও প্রশংসা কুড়িয়েছেন ফিটনেসের কারণে। সাফ বলছেন, ‘মোবাইল ছেড়ে যুবসমাজ সাইকেল চালাক। ফিটনেস নিয়ে ভাবতে হবে না আর। আমি কলকাতা সাইক্লোথন ২০২৫-এও অংশ নেব।’

আরও পড়ুন: ‘আমাদের আর…’! ‘রো-কো’র বিদায়ঘণ্টা বাজালেন রোহিতই! ভাইরাল গম্ভীরের সঙ্গে চ্যাট
কী এই কলকাতা সাইক্লোথন ২০২৫?
আগামী ৯ নভেম্বর (রবিবার) ভোর পৌনে চারটে থেকে কলকাতায় শুরু হবে একদিনের সাইকেল নিয়ে মহাযজ্ঞ। এই প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘কলকাতা সাইক্লোথন ২০২৫’। লোহা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ও কোল ইন্ডিয়ার নিবেদনে নিছকই শহরে কোনও সাইক্লিং ইভেন্ট হচ্ছে না। কলকাতাবাসীকে একত্রিত করে ফিটনেস এবং ‘কমিউনিটি স্পিরিট’ উদযাপনের মৌতাতও বটে। ফিটনেস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রচারেই দেওয়া হয়েছে জোর। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাইক্লিংকে নিয়মিত রুটিনে রাখতেই মানুষকে উৎসাহিত করছে কলকাতা সাইক্লোথন। গ্রিন মোবিলিটির প্রচারে সাইক্লিংকে পরিবেশ বান্ধব পরিবহণ মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরাও তাদের লক্ষ্য। কলকাতায় দূষণ এবং যানজট কমাতে সাহায্য করে সাইকেল। সাইক্লিংয়ের আনন্দের মাধ্যমে শহরের প্রতীকী ল্যান্ডমার্ক, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং সম্প্রদায়ের গর্বের কথা ওবলছে এই ইভেন্ট। সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততায় এমন এক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে, যেখানে পরিবার, যুব, কর্পোরেট এবং সাইক্লিং উত্সাহীরা এক সাধারণ উদ্দেশ্যে একত্রিত হতে পারবে এক ছাদের তলায়। ক্রীড়া সংস্কৃতি লালন করার সঙ্গেই পরবর্তী প্রজন্মের সাইক্লিস্টদের অনুপ্রাণিত করা এবং জাতীয় মানচিত্রে কলকাতাকে সাইক্লিং-বান্ধব শহর হিসেবে স্থান দিতে বদ্ধপরিকর কলকাতা সাইক্লোথন।
কলকাতা সাইক্লোথন নিয়ে কী বলছেন কৃষ্ণ প্রকাশ
কলকাতা সাইক্লোথনের সম্মানীয় রেস ডিরেক্টর হয়েছেন মহারাষ্ট্র পুলিসের ‘আয়রনম্যান’ আইপিএস কৃষ্ণ প্রকাশ। উর্দিতে যেমন তাঁর বর্ণময় কেরিয়ার। তেমনই সাইক্লিং ও ট্রায়াথলনেও কৃষ্ণ প্রকাশ বেশ পরিচিত নাম। ইনস্টাগ্রামে এডিজি কৃষ্ণ প্রকাশকে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ ফলো করেন। মহারাষ্ট্র পুলিসের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট, ফোর্স ওয়ানের প্রাক্তন প্রধান বর্তমানে পিম্পরি চিঞ্চওয়াড় অঞ্চলের পুলিশ কমিশনার। দক্ষিণ অঞ্চলে অতিরিক্ত কমিশনার এবং মুম্বইতে ইনস্পেকটর জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কৃষ্ণ প্রকাশ। তিনি একজন সম্মানিত ক্রীড়াবিদ। আয়রনম্যান ট্রায়াথলন সম্পন্ন করার জন্য ‘আয়রনম্যান’ নামেও পরিচিত। এমন এক আলট্রা-সাইক্লিস্ট যিনি ‘রেস অ্যাক্রস ওয়েস্ট’ এবং ‘রেস অ্যাক্রস ইস্ট’ উভয়ই সম্পন্ন করেছেন। সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন যে, করোনার সময় থেকে মুম্বই ও পুণের মতো মহারাষ্ট্রের শহরে সাইক্লোথন আয়োজন করে বিপুল সাড়া পেয়েছেন। এবার কলকাতাতেও বিপুল সাড়া পাবেন বলেই আশা করছেন। কৃষ্ণ প্রকাশ বললেন, ‘আমরা তো হাঁটার পরই সাইকেল শিখি, তাই সাইকেল আমাদের জীবনের অঙ্গ। সচিন তেন্ডুলকর একবার বলেছিলেন, ভারত স্পোর্টস লাভিং কান্ট্রি, তবে স্পোর্টস প্লেয়িং কান্ট্রি নয়, এই কথাটা ভীষণ ভাবে মাথায় গেঁথে আছে। চাইব কলকাতা সাইক্লোথনও ছাপ ফেলুক।’

রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ১৯৯ টাকা!
হকি মহারাষ্ট্রের চিফ ওপারেটিং অফিসার মেহেরপ্রকাশ তিওয়ারি জুড়েছেন কলকাতা সাইক্লোথনের সঙ্গে। তিনি বলছেন, ‘ট্যুর ডে ফ্রান্সের মতো বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক সাইক্লিং ইভেন্টের কথা যদি ধরেন, তাহলে দেখবেন সেখানে পেশাদাররা অংশ নেন। কলকাতা সাইক্লোথনে অংশগ্রহণকারীর কাছে স্রেফ সাইকেল থাকলেই হবে। সর্বনিম্ন ১৯৯ টাকায় আমরা রেজিস্ট্রেশনের খরচ রেখেছি। এত কম রেজিস্ট্রেশন ফি অভাবনীয় বললেও কম। সেখানেও আবার কুপোন কোড জুড়লে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। মানে ভাবুন প্রো-রাইডার না হলেও সে কলকাতা সাইক্লোথনে অংশ নিতে পারবে।’
রাইড ক্যাটেগরি
কলকাতা সাইক্লোথনে মূলত তিনটি রাইড ক্যাটেগরি রাখা হয়েছে। ৭০, ৫০ এবং ২৫ কিলোমিটার। ১০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ৫ কিলোমিটারের দৌড়ও রয়েছে। তবে এই দুই ইভেন্ট ফান ক্যাটেগরিতে। রাইড ক্যাটেগরিতে বয়েসর নিম্নসীমা ১৪ রাখা হয়েছে। তবে কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। সেই কারণেই নরেশ গুপ্তার মতো মানুষরাও অংশ নিতে পারছেন। ৭০ কিমি ইভেন্টের জয়ীকে নগদ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। প্রথম রানার আপ ও দ্বিতীয় রানার আপের বরাদ্দ যথাক্রমে ২০ ও ১৫ হাজার টাকা। ৫০ কিমি ইভেন্টে জিতলে থাকছে ২০ হাজার টাকা। প্রথম রানার আপ ও দ্বিতীয় রানার আপের বরাদ্দ যথাক্রমে ১৫ ও ১০ হাজার টাকা। ২৫ কিমি ইভেন্টে জিতলেই হাতে ১৫ হাজার টাকা। প্রথম রানার আপ ও দ্বিতীয় রানার আপের জন্য রাখা হয়েছে যথাক্রমে ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা। ফান ইভেন্টেও আর্থিক পুরস্কার থাকবে। তবে সেই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আলোচনার পর্যায় রয়েছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে , কলকাতায় এবার ১ দিন সাইকেল চালিয়েই জেতা যেতে পারে হাজার হাজার টাকা…
আরও পড়ুন: ‘রাখতে পারলাম না’! সদ্যোজাতের মুঠোয় বাবার আঙুল! মেয়েকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ স্টার অলরাউন্ডার
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
