বরুণ সেনগুপ্ত: রাজ্য শুরু হয়েছে এসআইআর(SIR)। ভোটার লিস্টের সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যেই এনআরসি-র আতঙ্ক। বছর খানেক আগে বাংলা তোলপাড় করেছিল এই এনআরসি। বহু মানুষ নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে ভুগছিলেন। সেই আতঙ্কেই নিজেকে শেষ করে দিলেন উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির মহাজাতি নগরের বাসিন্দা প্রদীপ কর(৫৭)। সোমবার নিজের ঘরেই আত্মঘাতী হন প্রদীপবাবু। এমনটাই দাবি প্রতিবেশীদের।
হাতের চারটি আংগুলি কাটা ছিল, তাই ভালো লিখতে পারত না আত্মঘাতী বৃদ্ধ প্রদীপ সুর। দাবী NRC আতংকে মৃত প্রদীপ সুরের ভগ্নিপতির
২০০২ সালে ২১৪ নং বুথের ভোটার ছিলো প্রদীপ বাবুর। বেডিং এর ব্যবসা করতেন প্রদীপ বাবু। প্রদীপ বাবুর ভগ্নিপতি উত্তম হাজরা জানাচ্ছেন দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি পানিহাটি বিধানসভার ভোটার ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবেশীরা দেখেন, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন প্রদীপ কর। মৃতদেহের পাশে রয়েছে একটি ডায়েরি। সেই ডাইরিতে লেখা আছে এনআরসি সম্পর্কিত বিষয়। ডায়েরির খাতার একদম নিচে লেখা আছে, ‘এনআরসি আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী’। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় খড়দহ থানার পুলিস। প্রদীপবাবুর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে খড়দহ থানার পুলিস।
ওই ঘটনা প্রকাশ্য আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ফেসবুক পোস্ট লিখেছেন, পানিহাটির প্রদীপ কর(৫৭) নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি একটি নোট লিখে গিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী NRC। বিজেপির ভয়ের ও বিভাজনের রাজনীতির এর থেকে বড়প্রমাণ আর কী হতে পারে!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ভেতর থেকে কেঁপে উঠছি কীভাবে বিজেপি এনআরসির ভয় দেখিয়ে মানুষের উপরে অত্যাচার করছে। মিথ্যে প্রচার করে যাচ্ছে, ভোটের আতঙ্কিত করে চলেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাকে এখন তারা আতঙ্কের আইনের জমানা করে তুলেছে। মানুষকে তাদের অস্তিত্ব নিয়েই ভয় পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির মিথ্যে প্রচারের ভয়ংকর পরিণতি এই মৃত্যু। দিল্লিতে বসে যারা জাতীয়তাবাদ শেখাচ্ছে তারা সাধারণ মানুষকে এমন হতাসার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে যে তারা এখন নিজেদের দেশেই মৃত্যুকে বেছে নিচ্ছে। তাদের একমাত্র ভয় যে তাদের বিদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, আমার দাবি কেন্দ্র সরকার এই নির্মম খেলা বন্ধ করুক। বাংলায় এনআরসি হবে না। কারও মর্যাদা, কারও সম্মান কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না। এই রাজ্য মা-মাটি-মানুষের। যারা হিংসার চাষ করে তাদের এই মাটি নয়। দিল্লির জমিদাররা শুনুন, বাংলা রুখে দাঁড়াবে।
