জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভারতীয় চলচ্চিত্রের ‘হ্যান্ডসাম হাঙ্ক’ ধর্মেন্দ্রের (Dharmendra) প্রয়াণের এক সপ্তাহ পেরোলেও, তাঁকে ঘিরে অনুরাগীদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অব্যাহত। তবে তাঁর দীর্ঘ ছয় দশকের বর্ণময় কেরিয়ারের পাশাপাশি, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন—বিশেষত দুটি বিয়ে এবং দুই পরিবারকে একইসঙ্গে আগলে রাখার কৌশল—এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
ধর্মেন্দ্র তাঁর প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌরকে (Prakash Kaur) কখনও ডিভোর্স দেননি, এবং তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দুই পরিবারকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ভালোবাসার এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। এই সম্পর্কের সবচেয়ে কঠিন নিয়মটি ছিল—হেমা মালিনী (Hema Malini) ও তাঁর পরিবারের কেউ ধর্মেন্দ্রের প্রথম বাড়িতে (যেখানে প্রকাশ কৌর ও প্রথম পক্ষের সন্তানরা থাকতেন) প্রবেশ করবেন না। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এই নিয়ম অটুট ছিল।
দীর্ঘ তিন দশকের এই অলঙ্ঘনীয় প্রথা ভেঙে যায় ২০১৫ সালে, এক বিশেষ মানবিক পরিস্থিতিতে এবং ধর্মেন্দ্রের দুই পরিবারের সন্তানদের সম্মিলিত শ্রদ্ধাবোধের কারণে। ২০১৫ সালে ধর্মেন্দ্রের বড় ভাই অজিত দেওল, যিনি অভিনেতা অভয় দেওলের বাবা, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অজিত দেওলের সঙ্গে এষা দেওল এবং অহনা দেওলের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক ছিল। কাকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ধর্মেন্দ্রের প্রথম বাড়িতে চিকিৎসার জন্য রাখা হয়। পরিস্থিতি বুঝে এষা দেওল সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি কাকাকে দেখতে যাবেন। কিন্তু এর অর্থ ছিল সেই বাড়িতে প্রবেশ করা, যেখানে তাঁর মায়ের পরিবারের কেউ কখনও পা রাখেননি।
ঐতিহাসিক এই সফরের আগে এষা দেওল যোগাযোগ করেন তাঁর সৎভাই সানি দেওলের সঙ্গে। সানি দেওল সবসময়ই দুই পরিবারের মধ্যে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করে এসেছেন। এষার মানবিক অনুরোধ শুনে তিনি আর দেরি করেননি। সানি নিজেই বাড়িতে এষার আগমনের সমস্ত ব্যবস্থা করেন এবং নিশ্চিত করেন যাতে তাঁর এই আগমনকে প্রথম পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিক ও উষ্ণভাবে গ্রহণ করেন।
এষার জন্য দীর্ঘ তিন দশকের সেই সফর ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। বাড়িতে প্রবেশ করার পরই তিনি প্রথমে তাঁর সৎমা প্রকাশ কৌরের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। প্রকাশ কৌর, যিনি তার সাদামাটা ও পারিবারিক মানসিকতার জন্য পরিচিত, তিনিও এষাকে আশীর্বাদ করেন।
পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে এষা এই মুহূর্তটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “আমি বাড়িতে ঢুকতেই প্রকাশ আণ্টির পা ছুঁয়ে প্রণাম করি। তিনি আমাকে আশীর্বাদ করেন। সানি ভাইয়া সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। সেই মুহূর্তটা খুব আবেগঘন ছিল।” এষা আরও জানান, সানি ও ববি দেওল দু’জনেই তাঁকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান এবং দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকা সত্ত্বেও সেই মুহূর্তে কেউই কোনো অস্বস্তি তৈরি করেননি। এটিই ছিল প্রথম এবং একমাত্র সময়, যখন হেমা মালিনীর পরিবারের কোনো সদস্য ধর্মেন্দ্রের প্রথম বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন।
ধর্মেন্দ্রের মৃত্যুর পর এই ঘটনাটি আবার সামনে আসে। এষা একেবারের জন্য সেই বাড়িতে গেলেও হেমা মালিনী কোনওদিনই সেই বাড়িতে পা রাখেননি। কারণ এটাই ছিল অলিখিত নিয়ম। সেই কারণেই ধর্মেন্দ্রর শেষ সময়ে পাশে থাকতে পারেননি হেমা। মৃত্যুর পরে তিনি ধর্মেন্দ্রকে দেখেন শ্মশানে। এমনকী তাঁর স্মরণসভাতেও ছিলেন না হেমা। নিজের বাড়িতে আলাদা করে স্মরণ সভার আয়োজন করেছিলেন হেমা। বিগত ৪৫ বছরে কোনওদিনই প্রকাশ কৌরের মুখোমুখি হননি হেমা। ধর্মেন্দ্রের মৃত্যুর পরেও সেই বাড়িতে পা রাখেননি হেমা। নিজের বাড়িতেই স্মরণ সভার আয়োজন করেন হেমা ও তাঁর দুই মেয়ে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
