জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ধর্মেন্দ্রর (Dharmendra) ৯০ তম জন্মদিনের সেলিব্রেশন নিয়ে বড়সড় পরিকল্পনা ছিল দেওল পরিবারের। কিন্তু তার আগেই গত ২৪ নভেম্বর প্রয়াত কিংবদন্তি। সোমবার অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর ৯০তম জন্মবার্ষিকী। স্বভাবতই এই বিশেষ দিনে আবেগি হেমা মালিনী। এদিন তাঁকে স্মরণ করে একটি দীর্ঘ ও হৃদয়স্পর্শী বার্তা লিখেছেন ড্রিম গার্ল।
হেমা মালিনী তাঁর পোস্টে লেখেন, “ধরমজি। শুভ জন্মদিন প্রিয়। তুমি চলে যাওয়ার পর দু’সপ্তাহের বেশি সময় কেটে গেছে, এখনও আমার হৃদয় ভঙ্গুর হয়ে আছে। ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছি এবং জীবনকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি, যদিও জানি তুমি আত্মায় সবসময় আমার সঙ্গেই থাকবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের একসঙ্গে কাটানো জীবনের আনন্দের স্মৃতিগুলো কখনোই মুছে যাবে না। সেই মুহূর্তগুলি মনে করাই আমাকে দারুণ শান্তি ও আনন্দ দেয়। আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের একসঙ্গে কাটানো সুন্দর বছরগুলোর জন্য, আমাদের দুটি সুন্দর কন্যার জন্য, যারা আমাদের পারস্পরিক ভালোবাসাকে বাড়িয়েছে এবং সেই সব সুন্দর, আনন্দের স্মৃতিগুলোর জন্য যা আমার হৃদয়ে রয়ে যাবে।”
হেমা তাঁর স্বামীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, “তোমার জন্মদিনে, আমার প্রার্থনা—ঈশ্বর যেন তোমাকে সেই শান্তি ও আনন্দ দেন, যা তুমি তোমার বিনয়, হৃদয়ের সরলতা এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসার জন্য প্রাপ্য। শুভ জন্মদিন প্রিয় ভালোবাসা।” ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে দুটি ছবি শেয়ার করে হেমা পোস্টটির শেষে লেখেন, “আমাদের আনন্দের ‘একসঙ্গে কাটানো’ মুহূর্তগুলি।”
Dharam ji
Happy birthday my dear heart
More than two weeks have passed since you left me heartbroken, slowly gathering up the pieces and trying to reconstruct my life, knowing that you will always be with me in spirit. The joyful memories of our life together can never be… pic.twitter.com/zY3QBJN0YE— Hema Malini (@dreamgirlhema) December 8, 2025
সানি দেওল তাঁর বাবার প্রতি উষ্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে বাবা-ছেলের এক শান্তিপূর্ণ মুহূর্তের ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওতে সানি ধর্মেন্দ্রকে পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে দেখা যায়। সানি তাঁর বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি নিজেকে উপভোগ করছো বাবা?’ জবাবে ধর্মেন্দ্র হাসিমুখে ও স্পষ্ট উত্তরে বলেন, ‘আমি সত্যিই উপভোগ করছি।’ ভিডিওর সঙ্গে সানি লিখেছেন: “আজ আমার বাবার জন্মদিন। বাবা সবসময় আমার সাথে আছেন, আমার ভেতরে তোমাকে ভালোবাসি বাবা। তোমাকে মিস করি।”
এষা দেওল তাঁর বাবার জন্য লেখেন, “আমার প্রিয় বাবা, আমাদের প্রতিশ্রুতি, সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধন। এই জীবনে, সমস্ত রাজ্যে এবং তার বাইরেও ‘আমরা’ একসঙ্গে… আমরা সবসময় একসঙ্গে থাকি বাবা। তা স্বর্গেই হোক বা পৃথিবীতে। আমরা এক। আপাতত আমি তোমাকে খুব সাবধানে, কোমলভাবে এবং মূল্যবানভাবে আমার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে রেখেছি… বাকি জীবন আমার সঙ্গে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জাদুকরী মূল্যবান স্মৃতি… জীবনের শিক্ষা, নির্দেশনা, উষ্ণতা, নিঃশর্ত ভালোবাসা, মর্যাদা এবং শক্তি যা তুমি তোমার কন্যা হিসেবে আমাকে দিয়েছ, তা অন্য কিছুর দ্বারা প্রতিস্থাপিত বা তুলনা করা যায় না।”
“আমি তোমাকে খুব মিস করি বাবা… তোমার উষ্ণ আলিঙ্গন যা সবচেয়ে আরামদায়ক কম্বলের মতো ছিল, তোমার নরম অথচ শক্তিশালী হাত ধরে রাখা, যার মধ্যে ছিল অব্যক্ত বার্তা এবং তোমার কণ্ঠস্বর যা আমার নাম ধরে ডাকার পর চলত অবিরাম কথোপকথন, হাসি ও শায়রি। তোমার মূলমন্ত্র ‘সবসময় নম্র থেকো, সুখী, সুস্থ এবং শক্তিশালী থেকো’। আমি গর্ব এবং সম্মানের সাথে তোমার উত্তরাধিকার বহন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এবং আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব তোমার ভালোবাসা সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে, যারা তোমাকে আমার মতোই ভালোবাসে। আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা। তোমার প্রিয় কন্যা, তোমার এশা, তোমার বিট্টু।”
ববি দেওলও তাঁর বাবাকে উদ্দেশ করে একটি আবেগঘন হিন্দি বার্তা লিখেছেন, যার কিছু অংশ নিচে দেওয়া হলো, “মেরে পেয়ারে পাপা আউর হামারে পেয়ারে ধরম, আপনার চিন্তায় আমি এই লিখছি। দুনিয়ায় এত ভালোবাসা নেই, যতটা আপনি আমরা সবাইকে দিয়েছেন। প্রতিটি হাসি, প্রতিটি ঝরে পড়া চোখের জলে আপনি আমাদের পাশে থেকেছেন, প্রতিটি সমস্যায় হাত বাড়িয়েছেন। সেভাবে, যেভাবে শুধু আমাদের ধরমই করতে পারতেন।”
ববি আরও লেখেন, “… হি-ম্যান তো আপনি সবার, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আপনি আমার হিরো। আপনার থেকেই আমরা স্বপ্ন দেখতে শিখেছি, আপনার থেকেই আমরা আত্মবিশ্বাস করতে শিখেছি, আপনার সংস্কার থেকেই আমরা দেওল হয়েছি। পাপা তো আপনি আমার, কিন্তু ধরম আপনি আমরা সবার। আপনার হতে পেরে গর্বিত। শুভ জন্মদিন, আমার বাবা।”
ধর্মেন্দ্রর ভাইপো অভিনেতা অভয় দেওলও একটি পুরনো ছবি শেয়ার করে শৈশবের স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন যে ধর্মেন্দ্র তাঁকে এমন এক জীবনের শিক্ষা দিয়েছিলেন যা তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর সঙ্গে থাকবে। তিনি লিখেছেন, “১৯৮৫ বা ‘৮৬ সালের কথা। আমাকে কেবল তিরস্কার করা হয়েছিল তাই আমি বিরক্ত হয়েছিলাম। তিনি আমাকে তার কাছে ডেকেছিলেন, আমাকে তার পাশে বসিয়ে বললেন, ‘আলোর দিকে তাকাও’, এবং ফটোগ্রাফারকে এই ছবিটি তুলতে বললেন। আমি সেই মুহূর্তটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যখন আমার সময় আসবে, যখন আমি তাকে আবার সেই কথাগুলি বলতে শুনব।”
প্রসঙ্গত, অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মুম্বইয়ের বাড়িতে ২৪ নভেম্বর প্রয়াত হন। এর আগে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তিনি ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হলেও ১২ নভেম্বর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে বাড়ি ফিরলেও শেষরক্ষা হয়নি। ৮৯ বছরে চলে যান কিংবদন্তি। বাবাকে হারানোর বেদনায় অন্যান্য সন্তানরাও এদিন আবেগঘন বার্তা লিখেছেন।
এক সময় ধর্মেন্দ্রর মৃত্যু নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল নানা গুজব। তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীনই ছড়িয়ে পড়ে তাঁর মৃত্যুর খবর। সেই খবর নস্যাত্ করে নেটিজেন ও মিডিয়াকে তুলোধনা করেছিলেন হেমা থেকে শুরু করে সানি, ববি, এষা। এরপর কিংবদন্তিকে বাড়ি নিয়ে আসে দেওল পরিবার। বাড়িতেই চলছিল চিকিত্সা। ২৪ নভেম্বর দুপুরে আচমকাই শ্মশানে পথে রওনা দেয় দেওল পরিবার। একে একে হাজির হন অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, সলমান খান, আমির খান। জানা যায় আর নেই সকলের প্রিয় ধরমজি। গোপনেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় অভিনেতার। জানা যায়, তাঁর ইচ্ছাতেই গোপন রাখা হয়েছিল শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
