জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: শীতের আমেজ মাখা তিলোত্তমার বুকেও সুরের স্রোত। প্রতি বছরের মতো এবারও ডিসেম্বরের তিন দিন নজরুল মঞ্চ ভাসল রাগ-সঙ্গীতের মূর্ছনায়। দেখতে দেখতে ১৩ বছরে পা রাখল ‘স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল’। দেশের প্রাজ্ঞ পণ্ডিত ও উস্তাদদের উপস্থিতিতে এই উৎসব এখন ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অন্যতম সেরা পীঠস্থান হিসেবে সমাদৃত। ১২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর, সুরের এই মহোৎসবে মেতে রইল শহর।

আরও পড়ুন: Sunny Deol: বাবার মৃত্যুর পর প্রথম জনসমক্ষে! ‘বর্ডার ২’র প্রচারে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সানি দেওল…
পদ্মশ্রী পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার এবং তাঁর পরিবার (শ্রী রঞ্জিনী ফাউন্ডেশন)-এর তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই উৎসবের নাম তাঁর গুরু, কিংবদন্তি সরোদিয়া উস্তাদ আলি আকবর খানের নামাঙ্কিত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত এল সুব্রহ্মণ্যম, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, পণ্ডিত স্বপন চৌধুরীর মতো দিকপাল শিল্পীরা। ছিলেন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং দেবাশিস কুমারও।

তেজেন্দ্রনারায়ণের কথায় বিনয় আর শ্রদ্ধার সুর, ‘আলি আকবর খাঁ সাহেব ঠিক কতটা বিশাল মাপের শিল্পী ছিলেন, তা পরিমাপ করার ক্ষমতা আমার নেই। ওঁর নামেই এই উৎসব।’ তিনি আরও জানান, এই মঞ্চ শুধু প্রবীণদের নয়, নবীন প্রতিভাদেরও সমান গুরুত্ব দেয়। তবে এবছর উৎসবের আবহে মিশে ছিল একটা বিষণ্ণতা। গত বছর ঠিক এই উৎসব চলাকালীনই ইহলোক ত্যাগ করেন কিংবদন্তি তবলাবাদক উস্তাদ জাকির হোসেন (তবলা লহরা)। তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করল এবারের আসর।
আরও পড়ুন:Dipanwita Rakshit Wedding: আইনি বিয়ে করলেন ‘খুকুমণি’ দীপান্বিতা, পাত্র গৌরবকে চেনেন?
তিন দিন ধরে নজরুল মঞ্চে ছিল নক্ষত্র সমাবেশ। উস্তাদ জাকির হোসেনকে শ্রদ্ধা জানান উস্তাদ তৌফিক কুরেশি (ডিজেম্বে), পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ (তবলা) এবং পণ্ডিত রাকেশ চৌরাশিয়া (বাঁশি)। পণ্ডিত উল্লাস কশলকর এবং সুরেশ তলওয়ালকরের যুগলবন্দি দর্শকদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানে এসে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি প্রখ্যাত গায়িকা কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। বিনম্র সুরে তিনি বলেন, ‘আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী নই, কিন্তু এই অসামান্য গুণীজনদের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাঁদের কারণেই আমার এই পথচলা সার্থক।’ শহর কলকাতার প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘কলকাতা আমার কাছে পুণ্যভূমি। মনে হয়, পূর্বজন্মে আমি নিশ্চিতভাবেই বাঙালি ছিলাম।’

উৎসবের অন্তিমলগ্নে মঞ্চ মাতালেন খোদ পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও পণ্ডিত স্বপন চৌধুরী। শিল্পী জানান, এই স্বপন চৌধুরীর মাধ্যমেই তিনি তাঁর গুরুর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। প্রথা মেনে শেষ দিনেও সুযোগ পেলেন নবীনরা। তেজেন্দ্রনারায়ণের সুযোগ্য পুত্র ইন্দ্রায়ুধ মজুমদারের পরিচালনায় ছাত্ররা এক অসাধারণ যন্ত্রসঙ্গীত উপহার দেন। তবে, কলকাতার শীতের সন্ধ্যায় ধ্রুপদী সঙ্গীতের এই তর্পণ প্রমাণ করে দিল সুরের কোনও সীমানা নেই, তা শুধু আত্মাকে তৃপ্তি দেয়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
