Taslima Nasrin, The Kerala Story, Muslims, Bangladesh, Pakistan, Terrorism, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গত সপ্তাহ থেকেই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। এই ছবি নিয়ে ইতোমধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক মহল। তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এই ছবি। সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে পারে এই ছবি, সেই কারণেই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার এই ছবি দেখে মুখ খুললেন বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
দ্য কেরালা স্টোরি দেখে সাহিত্যিক লিখেছেন, “দ্য কেরালা স্টোরি দেখা হল। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখার সময় যেরকম অনুভূতি, এই সিনেমা দেখার সময় প্রায় একই রকম অনুভূতি আমার। যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী। পৃথিবীর প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারি। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজদার বহুত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না জানা, ধর্ম না মানা লোকের সংখ্যাই, আমার বিশ্বাস, বেশি। মেয়েদের সমানাধিকারে আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করা, শিক্ষিত সভ্য লোকও এই সম্প্রদায়ে প্রচুর। এগনোস্টিক আর এথিস্টের সংখ্যাও তো বাড়ছে। এরা ধর্ম ঠিকঠাক না মানলেও এদের মুসলমান বলেই ডাকা হয়, যেমন ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম না মানা লোকদেরও ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ বলে ডাকা হয়। এসব তাদের ধার্মিক পরিচয় নয়, এসব সাংস্কৃতিক পরিচয়”।
আরও পড়ুন- Shakib Khan: ‘বুবলীর সঙ্গে সব সম্পর্ক শেষ’! চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শাকিবের…
তবে আইসিসের বর্বরতা নিয়ে তৈরি এই ছবি অন্যান্য ছবির থেকে উন্নতমানের বলে দাবি তসলিমার। তিনি লেখেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কোনওভাবেই উন্নতমানের ফিচার ফিল্ম নয়। এতে আছে কিছু সত্য তথ্য, আছে অতিরঞ্জন। কোরান হাদিসের মানবতাবিরোধী আর নারীবিরোধী শ্লোকগুলো বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে এত বেশি গুঁজে দেওয়া হয়েছে, যে, কারও সংলাপকে স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত মনে হয়নি। আইসিসদের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমা বানানো হয়েছে, সিনেমাগুলো দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে কিন্তু বেটার’।
এমনকী কেরালায় গিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেল তসলিমা। লেখিকা লেখেন, ‘কেরালা লিটফেস্টে অংশ নিতে রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা কোঝিকড় বা কালিকটে বেশ কয়েকবার গিয়েছি আমি। কালিকটে, আমি অবাক হয়েছি, অনেক মুসলমান নারী পুরুষ আমার স্পিচ শুনতে এসেছে, এমনকী আমার অটোগ্রাফ নিয়ে গেছে। আমার নাম ঘোষণা করা সত্ত্বেও মুসলমানরা তসলিমা বিরোধী মিছিল করেনি, মিছিল বরং সেক্যুলার কলকাতায় করেছিল কট্টর মুসলমানেরা। কেরালার ৩২০০০ মেয়ে আইসিসে যোগ দিয়েছে, এই তথ্য সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে বরং মুসলমানেরা বেশি যোগ দিয়েছে আইসিসে। এই দুটো দেশে আইসিসের আক্রমণও নেহাত কম হয়নি। দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে জরুরি ‘দ্য পাকিস্তান স্টোরি’ বা ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’ বানানো’।
আরও পড়ুন- Kriti Sanon: চেয়ার না পেয়ে মেঝেতেই বসে পড়লেন কৃতি! কী এমন হল?
তবে এই ছবি নিষিদ্ধ হওয়ার বিরোধীতা করে তসলিমা লেখেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ আমার পছন্দের সিনেমা নয়। তাই বলে আমি কিন্তু চাই না এই সিনেমা কোথাও নিষিদ্ধ হোক, কোথাও এর প্রদর্শনী কোনও কারণে বন্ধ থাকুক। এই সিনেমা হয়তো কিছু মানুষকে মুসলিমবিরোধী হতে উদবুদ্ধ করবে। অনেক শিল্প সাহিত্যেই কোনও দর্শনের বিপক্ষে, কোনও জাতি বা সম্প্রদায় বা ব্যক্তির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা থাকে, তাই বলে সেইসব শিল্প সাহিত্যকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে কেন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর তৈরি সিনেমাগুলো দেখে জার্মান জাতির ওপর দর্শকরা ক্ষুব্ধ হতে পারে, তাই বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর সিনেমা বানানো বন্ধ করতে হবে নাকি! দ্য কেরালা স্টোরি যারা নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাদের ক্ষোভের বারুদে আগুন নিক্ষেপ না করে বরং ‘দ্য ইউপি স্টোরি’ নামে সিনেমা বানান ! কেউ তো বাধা দেয়নি।’