এমনকী, তাঁর এই পদক্ষেপকে দল-বিরোধী পর্যন্ত আখ্যা দিয়ে গেরুয়া শিবিরের একাংশের যুক্তি, ‘খোলা হাওয়া’র ব্যানারে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করে স্বপন দাশগুপ্তরা দলের অন্দরের রেষারেষিকে আরও প্রকট করে তুলেছেন। যদিও স্বপন শিবিরের এক নেতার কথায়, ‘খোদ অমিত শাহ সশরীরে হাজির ছিলেন গত ৯ মে খোলা হওয়ার উদ্যোগে পালিত রবীন্দ্রজয়ন্তীতে। দল-বিরোধী কিছু ঘটছে বলে মনে হলে তিনি নিশ্চয়ই দেড় ঘণ্টা ওই অনুষ্ঠানে কাটাতেন না। দলের একাংশের গাত্রদাহটা ঠিক কোথায়, সেটা সবাই বুঝতে পারছেন।’
বিজেপি সূত্রের খবর, ‘খোলা হাওয়া’র অনুষ্ঠানের পর স্বপনকে বার্তা দিতে তাঁরই ঘনিষ্ঠ শঙ্কুদেব পণ্ডার ডানা ছাঁটা হয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সান্ধ্যকালীন বিতর্কসভায় শঙ্কুর অংশ নেওয়ার উপর বিজেপির তরফে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তাতে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ বঙ্গ-বিজেপির কোর কমিটির সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত।
সূত্রের খবর, তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে বিষয়টি এনেছেন। এই প্রসঙ্গে স্বপন বলেন, ‘খোলা হওয়া একটি সামাজিক সংগঠন। তার ব্যানারেই আমরা রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করেছিলাম। শঙ্কুদেবও তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমি শুনেছি, তাঁকে আরও কোনও টিভি চ্যানেলে পাঠানো হচ্ছে না। কোনও অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করলে তা কেন দলবিরোধী হবে, বুঝতে পারছি না।’ যদিও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এই ব্যাপারে স্বপনদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে হওয়া রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বক্তার তালিকায় দু’জনকে রেখেছিলেন স্বপন তথা আয়োজকরা- অমিত শাহ ও শুভেন্দু।
বিজেপির অন্দরের খবর, দলের উদ্যোগেই এ বছর ঘটা করে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে চেয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদাররা। কিন্তু তার আগেই স্বপন ‘খোলা হওয়া’র ব্যানারে রবি ঠাকুরের জন্মদিন পালনের তোড়জোড় শুরু করে দেন। স্বপন, শঙ্কুদের এই উদ্যোগে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করেন শুভেন্দুও। ফলে একই দিনে আলাদা ভাবে দলের তরফে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের পথে সুকান্তরা হাঁটেননি।
কিন্তু বিষয়টিকে তাঁরা সহজে হজমও করতে পারেননি বলে গেরুয়া শিবিরের একাংশের দাবি। রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর প্রশ্ন, ‘বিজেপির কী লাভ হলো? শুধু স্বপনবাবুর নিজের প্রচার হলো।’ যদিও স্বপন-ঘনিষ্ঠদের পাল্টা যুক্তি, বিজেপির নাম কোথাও ছিল না বলেই বহু বিশিষ্ট মানুষ ওই দিন সায়েন্স সিটি-র অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘আমার কিছু জানা নেই।’ আর শঙ্কুদেব বলছেন, ‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রকাশ্যে কিছু বলব না।’