তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা/মন জানো না…। সহজিয়া গানে মনের না-ই জানা থাকতে পারে সংখ্যাটা। তবে ‘কয় জনা’, সেই তথ্য-পরিসংখ্যান কিন্তু সরকারি আধিকারিকদের একাংশকে জানাতেই হবে! না-হলে পদোন্নতির পথে কাঁটা পড়বে। রীতিমতো নির্দিষ্ট ঘোষণাপত্রে সই করে জানাতে হবে, ‘আমি এতদ্বারা জানাচ্ছি যে, আমার একজনই মাত্র জীবিত স্বামী/ স্ত্রী আছেন…। I hereby declare that I have one living spouse…।’ প্রশাসনিক মহলে এ রকম ঘোষণাপত্র সচরাচর চোখে পড়ে না। কিন্তু পঞ্চায়েত দপ্তরের একটি নির্দেশিকা অন্য রকম কথা বলছে।
কিছু দিন আগে পঞ্চায়েত দপ্তর একটি নির্দেশনামা জারি করে রাজ্যের পাহাড় থেকে সাগর- বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকদের জানিয়েছে যে, ৬৪ জন যুগ্ম বিডিও-কে ডব্লিউবিসিএস (২০২১) ক্যাডার পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। সেই পদোন্নতি নিতে তাঁরা আগ্রহী কিনা, সেটা তাঁদের ঘোষণাপত্রে সই করে জানাতে হবে। আবার যাঁরা রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ক্যাডার পদে যোগ দিতে ইচ্ছুক নন, তাঁদেরও সেটা জানাতে হবে একই পদ্ধতিতে। কিন্তু পদোন্নতি চাওয়া বা না-চাওয়া, দু’ক্ষেত্রেই জানাতে হবে, প্রত্যেকের এক জন স্বামী/স্ত্রী আছেন। ৬৪ জন অফিসারের নামের তালিকাও ওই সরকারি নির্দেশনামার সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষায় সফল কোনও পরীক্ষার্থীকে বা বিভাগীয় পদোন্নতির জন্য মনোনীত আধিকারিককে কখনও এমন কিছু জানাতে হয়েছে, এমনটা আমার জানা নেই। এর সঙ্গে পদোন্নতির সম্পর্ক কোথায়?’ ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের এক অফিসারের কথায়, ‘জেলা স্তরে নিয়োগের দায়িত্ব পালন করেছি।
কাউকে এমন কোনও কাগজে সই করাই নি। আমি নিজেও ডব্লিউবিসিএস হয়ে এই ধরনের ঘোষণাপত্রে সই করিনি।’ আবার শিক্ষা দপ্তরের এক অফিসার বলছেন, ‘পদোন্নতি হয়ে ধাপে ধাপে একটা স্তরে পৌঁছেছি। কই, আমার জীবনসঙ্গী এক জন, সে কথা তো কখনও কাউকে জানাতে হয়নি!’
তবে নবান্নের এক শীর্ষকর্তার অভিমত, ‘বহুগামিতা যে এড়িয়ে চলাই ভাল, সেটাই প্রকারান্তরে বোঝানো হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।’ তাঁর যুক্তি, ‘একাধিক স্পাউস অর্থাৎ কোনও সরকারি অফিসার বা কর্মীর একাধিক স্বামী বা স্ত্রী থাকলে তো অবসরের পর পেনশন এবং অন্যান্য অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধে নিয়েও নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়।’ কিন্তু এ কথা সম্ভবত তাঁদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যাঁরা একাধিক বিয়ে করেছেন প্রথম স্ত্রী বা স্বামীর আইনি বিচ্ছেদ না-হওয়া সত্ত্বেও। কিন্তু সমাজের কিছু স্তরে একাধিক স্ত্রী বা স্বামী থাকার বিষয়টি স্বীকৃত ও বৈধ হিসেবে গণ্য।
এই ব্যাপারে সরকারি বিধি কী বলছে?
ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিসেস (ডিউটিস, রাইট্স অ্যান্ড অবলিগেশন অফ দ্য গর্ভমেন্ট এমপ্লয়িজ়) রুল্স, ১৯৮০-র ‘দায়বদ্ধতার’ ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি এক জন সরকারি কর্মীর স্ত্রী/স্বামী থাকে, তিনি সেই বিবাহবন্ধন থেকে বেরিয়ে না-এসে আর একটি বিবাহ করতে পারবেন না। এমনকী, তাঁর সমাজগত পার্সোনাল ল অন্য একটি বিবাহের রায় দিলেও তিনি তা পারেন না।’