প্রসেনজিত্ সরদার: ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে একই পরিবারের ৩ ভাইকে। বুকফাটা কান্নার রোলে ভারী বাংলার বাসন্তীর বাতাস। এদিন সকালে বাসন্তীর ছড়ানিখালিতে পরিবারের কাছে এসে পৌঁছয় পাঁচটি মৃতদেহ। এরমধ্যে রয়েছে একই পরিবারের তিন ভাইয়ের দেহ। সেইসঙ্গে পাশাপাশি বাড়িতে নিয়ে আসা হয় আরও দুটি দেহ। দুপুর নাগাদ আরও একটি দেহ এসে পৌঁছানোর কথা একই গ্রামে। ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে একই গ্রামের ছটি প্রাণকে। শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। শুরু হয়েছে শেষকৃত্য প্রক্রিয়াও। ঘরের ছেলেদের শেষবার চোখে দেখার জন্য আকুল পরিবারের সবাই। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সবাই। উপস্থিত রয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনিক প্রতিনিধিরাও। গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা সবাই এই হতভাগ্য পরিবারগুলির পাশে থাকবে।
ওদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে এখনও নিখোঁজ পূর্ব মেদিনীপুরের ৩ শ্রমিক। কোলাঘাট থানার অন্তর্গত নামালবাড় গ্রামের বাসিন্দা এই তিনজন শ্রমিক। রোজগারের তাগিদে ভিন রাজ্যে কাজের জন্য অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে করেই যাচ্ছিলেন তাঁরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর থেকে খোঁজ নেই সেই তিন শ্রমিকের। এখনও কোনও খোঁজ না মেলায় উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছে পরিবারগুলি। শেখ জহুর আলি, মুসিবুল পাখিরা, জয়নাল পাখিরা নামে ওই তিন শ্রমিক মার্বেল কাজের জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেস করে ভুবনেশ্বরের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকেই আর খোঁজ নেই! আদৌ বাড়ির মানুষ সুস্থভাবে বাড়ি ফিরবে তো? উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছে তিন পরিবার।
তিনজনই বিবাহিত। তিনজনেরই ছোট ছোট সন্তান রয়েছে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে প্রত্যেকের পরিবার পরিজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় বাড়ির সামনে। সকলে চাইছেন তাঁদের প্রতিবেশী তিন যুবক যেন ভাগ্য়ের জোরে বেঁচে ফিরে আসেন বাড়িতে। ওদিকে দুর্ঘটনার জেরে বহু দেহ তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। দেহগুলির এমন অবস্থা যে কাউকে চিনতে পারা যাচ্ছে না। এরকম বহু দেহ পড়ে রয়েছে মর্গে। বাহানাগা অস্থায়ী মর্গের বাইরে এখনও অসহায় মানুষদের ভিড়। কেউ ছুটে এসেছেন পাঁশকুড়া থেকে। কেউ বিহার থেকে। সকলেই ছবি হাতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিঁখোজ পরিজনকে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় চেন্নাইগামী আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ১২৮৪১ চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস হাওড়ার শালিমার থেকে দুপুর বেলায় রওনা দেয়। তারপর সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে নাকি একটি মালগাড়িকে ধাক্কা মারে। মালগাড়ির সঙ্গে ট্রেনটির সংঘর্ষ এতটাই জোরালো ছিল যে করমণ্ডলের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপর চেপে যায়। ৩টি বগি বাদে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সব কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। লাইনচ্যুত করমণ্ডলের কামরার সঙ্গে ধাক্কা লেগে আবার ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও বেশ কয়েকটি কামরা বেলাইন হয়ে যায়। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৯৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত প্রায় ৬৫০।
দুর্ঘটনার পরই একাধিক হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। হাওড়ার হেল্পলাইন নম্বর – ০৩৩ ২৬৩৮২২১৭, খড়গপুরের হেল্পলাইন নম্বর – ৮৯৭২০৭৩৯২৫, ৯৩৩২৩৯২৩৩৯, বালেশ্বরের হেল্পলাইন নম্বর – ৮২৪৯৫৯১৫৫৯, ৭৯৭৮৪১৮৩২২, শালিমারের হেল্পলাইন নম্বর – ৯৯০৩৩৭০৭৪৬, চেন্নাইয়ের হেল্পলাইন নম্বর – ০৪৪ ২৫৩৩০৯৫২/০৪৪-২৫৩৩০৯৫৩/০৪৪-২৫৩৫৪৭৭১, ভদ্রক- ৮৪৫৫৮৮৯৯০০, কেওনঝড় রোড- ৮৪৫৫৮৮৯৯০৬, কটক- ৮৪৫৫৮৮৯৯১৭, ভুবনেশ্বর- ৮৪৫৫৮৮৯৯২২, খুরদা রোড- ৬৩৭০১০৮০৪৬।
আরও পড়ুন, ‘সেনায় কাজ করেও এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়নি!’ মোবাইলের আলোয় ২৮ জনকে উদ্ধার, শিউরে উঠছেন রঞ্জন