প্রবীর চক্রবর্তী: পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে। এনিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রুট মার্চ শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে নামছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ায় প্রচার করবেন উত্তরবঙ্গে। সোমবার কোচবিহার থেকে প্রচার শুরু করবেন মমতা। অন্যদিকে, দক্ষিণবঙ্গে প্রচার শুরু করবেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়। আগামী ২৭ জুন নদিয়ায় প্রচারে যাচ্ছেন অভিষেক। ৩০ জুন যাবেন বীরভূমে।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ শুরু; প্রার্থীদের প্রচারে নজর, একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করল কমিশন
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে যাচ্ছেন নদিয়ায়। একটা সময়ে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হলেও ২০১৯ ও ২০২১ সালের লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফল করতে পারেনি। নদিয়ার পাশাপাশি বীরভূম-সহ বিভিন্ন জেলায় যাবেন অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২৭ জুন নদিয়ায় সভার পাশাপাশি মুর্শিদাবাদে রোড শো করবেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার করবেন নবজোয়ার কর্মসূচির ঢংয়ে। বড়সভার পাশাপাশি রোড শো, মানুষের কাছে চলে যাওয়ার মতো বিষয় দিয়ে প্রচার সারবেন। ইতিমধ্য়েই রাস্তায় নেমেছেন তৃণমূল নেতারা। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গে প্রচার শেষ করে দক্ষিণবঙ্গে ফিরলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চলে যাবেন উত্তরবঙ্গে। ফলে পুরোপুরি পরিকল্পানা করেই প্রচারে নামছেন মমতা ও অভিষেক।
অনুব্রত মণ্ডল জেলে। তিনি জেলে যেতেই বীরভূমে দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। তবে মনোনয়ন পর্ব শেষ হতেই জেলের ১০১৯ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কাজল সেখকে ময়দানে নামিয়ে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টার পাশাপাশি বীরভূমকে নজরেই রেখেছে ঘাসফুল শিবির। সেই লক্ষ্যেই বীরভূমে যাচ্ছেন অভিষেক। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দক্ষিণবঙ্গে এমনকিছু জেলাকে অভিষেক বেছে নিচ্ছেন যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফল করলেও সাংগঠনিক দিকটির উপরে জোর দিচ্ছেন তিনি।
এদিকে, এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ হল নির্দল কাঁটা। জেলায় জেলায় তৃণমূল কর্মীরা টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন পেশ করেছেন। এতে বিপদ বেড়েছে দলের। উত্তরে আব্দুল করিম চৌধুরী, মুর্শিদাবাদে হুমায়ুন কবীর নির্দল প্রার্থী নিয়ে দলকে বিঁধেছেন। কিন্তু দল আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, নির্দল হিসেবে যারা মনোনয়ন দাখিল করেছেন তারা ফিরিয়ে নিন। তা নইলে কড়া ব্যবস্থা। পঞ্চায়েতে ভোটে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়ে তা তুলে না নেওয়ায় ৫৬ জন তৃণমূল কর্মীকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল কংগ্রেস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। দলের তরফে আগেই বলা হয়েছিল, নির্দল হয়ে যারা মনোনয় জমা দিয়েছিলেন তা তুলে নিন। ভবিষ্যতে দল তাদের পাশে থাকবে। কিন্তু না তুললে দল তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। সেটাই শেষপর্যন্ত করা হল।
নবজোয়ার কর্মসূচিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার হুঁশিয়ারি গিয়েছিলেন, যারা নির্দল হিসেবে দাঁড়াবেন তাদের জন্য দলের দরজা বন্ধ। অভষেক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্দল হিসেবে জিতে যদি মনে করেন তৃণমূলে যোগ দেবেন তাহলে ভুল করছেন। ওই সতর্কবার্তার পরও জেলায় জেলায় বহু তৃণমূল কর্মী নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েন। তার পরই জেলা ধরে ধরে দলের কারা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে দল। ওইসব তৃণণূল নেতাকে মনোনয়ন তুলে নেওয়ার কথা বলার পরও তারা তা তুলে নেয়নি। এবার সেই তালিকা ধরে ধরে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস।
শনিবার দলের মোট ৫৬ জনকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এদের মধ্যে নদিয়ার সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি। সেখানে সাসপেন্ড হয়েছেন ২১ জন। উত্তর দিনাজপুরের রয়েছেন ১৭ জন এবং বাকীরা রয়েছেন অন্যান্য জেলায়। তালিকায় আরও যারা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা যাচ্ছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এতে দলের অস্বস্তি বাড়বে না। বরং দল যে তার সিদ্ধান্তে অনড় তা জানিয়ে দেওয়া হল।