তাতেই দেখা যায়, বেশ নাদুসনুদুস চেহারার একজন ডাকাতদের দিকে রিভলভার হাতে তেড়ে যাচ্ছেন। স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে থাকা ওই ডাকাতদের দিকে জীবনের ঝুঁকিয়ে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। বছর ২৫-৩০-এর ওই দুষ্কৃতীরা যখন পালাতে পালাতেও ঘুরে দাঁড়িয়ে গুলি ছুঁড়েছে, তখন জং ধরা সেই রিভলভার থেকে পাল্টা গুলি ছুড়েছেন তুলনায় বয়স্ক ও স্থূল চেহারার রতন। স্থানীয় লোকজন জানলা দিয়ে উঁকি মারলেও প্রথমে তাঁর পরিচয় টের পাননি। কারণ উর্দি নয়, তিনি ছিলেন সাদা পোশাকে। পরে অবশ্য জানা যায় তাঁর পরিচয়।
সিসি টিভি ফুটেজে তাঁর ‘খুঁড়িয়ে’ ছুটে যাওয়া দেখে অনেকে ভেবেছিলেন, তিনি বোধ হয় ডাকাতদের গুলিতে জখম হয়েছেন। পরে জানা যায়, একশো কেজির বেশি শরীরের ওজন বলে তিনি ভালো করে দৌড়তে পারেন না। বন্ধু থেকে শুরু করে পুলিশকর্মী মহলে তাঁর ভারী শরীর নিয়ে কম রসিকতা হয়নি। সেই রতনবাবু সব রসিকতার জবাব দিয়েছেন গুলি ছুড়ে দুই ডাকাতকে পাকড়াও করে।
বুধবার রানাঘাটের পুরপ্রধান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ওয়ার্ডে রাখিবন্ধন উৎসবে সেই রতনকে ডেকে এনে অনেকগুলো রাখি বেঁধে দেন তাঁর হাতে। নাগরিক সংবর্ধনাও দেন। মিষ্টি খাওয়ান। ওই টিমে থাকা অন্য পুলিশকর্মীদেরও এদিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রতন বলেন, ‘পুলিশকর্মীরা বিভিন্ন দিক থেকে এলাকা ঘিরেছিলেন। আমার নেতৃত্বে দলে মোট চার জন আগে সামনে আসি। অন্য কোনও কথা ভাবার সময় ছিল না। মরি মরব, পুলিশের সম্মান বাঁচাতে হবে এটাই একমাত্র চেষ্টা ছিল তখন।’
চার রাউন্ড গুলি চালাতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি বলেন, ‘দু’জনকে গুলিতে জখম করে ধরতে পেরেছি। যখন ডাকাতরা ছুটছিল, পথের লোকজনকে কোনও রকমে বলছিলাম দোকান বাড়ির ছাদে উঠে যেতে। ওরা ডাকাত চিৎকার করে একথা জানিয়েও দিচ্ছিলাম এলাকার লোকজনকে। ছাদে উঠে গিয়ে স্থানীয় লোকজন যাতে আমাদের বলে দেয় ডাকাতেরা কে কোন দিকে দৌড়ে পালাচ্ছে, সেই আর্জিও জানিয়েছিলাম।’ আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালবাগে। ২৭ বছর চলছে চাকরি জীবন। ফুটেজ দেখে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে চরম উৎকণ্ঠায় ছিলেন। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। গর্বিত তাঁরাও।