পাড়ার হিরো মুরসালিম
সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মুরসালিম। সকাল থেকেই তার বাড়ির আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকের ভিড়। কোরিআলী এলাকার ঝাঙ্গর পাড়ার বাড়ির উঠোনে উপচে পড়ছে মানুষের ঢল। সবাই তার কাজের প্রশংসা করছেন। আশীর্বাদ করে যাচ্ছেন এই ছোট্ট কিশোরকে।
কী ঘটনা ঘটেছিল?
শুক্রবার গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে মুরসালিম গিয়েছিলেন ভালুকা রোড স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে। লাইনের পাটাতনের নিচে বৃষ্টির জলে ধ্বস নেমে বড়সড় গর্ত তৈরি হয়েছে। চোখে পড়ে কয়েকজনের। চিৎকার করে দলের অন্যদের ডাকেন। এরমধ্যেই দেখা যায় ওই লাইন ধরেই ছুটে আসছে আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। দলের মধ্যে একমাত্র মুরসালিমের গায়ে ছিল লাল গেঞ্জি। দেরি না করে মুরসালিম তখন লাল গেঞ্জি খুলেই ট্রেনের দিকেই দৌড় লাগায়। ট্রেন চালকের নজরে আশায় দাঁড়িয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। রক্ষা পায় বহু যাত্রী।
ঘটনার পরেই ভাইরাল ভিডিয়ো
ঘটনার পরেই রাতারাতি নায়ক বনে যায় মুরসালিম। আজ এই সাহসী বালককে সম্বর্ধনা দিতে ছুটে আসেন রাজ্যের বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক তাজমুল হোসেন। তিনি মুরসালিম সহ দলের আরও প্রত্যেকের গলায় মালা পরিয়ে সম্বর্ধনা জানান। সরকার থেকে যাতে সে সাহায্য পায় সেই ব্যবস্থার জন্য আশ্বাসও দেন তাজমুল সাহেব। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের যুব সভাপতি মনিরুল ইসলাম সহ আরো অনেকে।
পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন বিধায়ক
মুরসালিমের উঠোনে দাঁড়িয়ে রেল দফতরকে তীব্র কটাক্ষ করেন বিধায়ক তজমুল হোসেন। মুরসালিমের আগামীতে পড়ালেখার দায়িত্ব নেন তিনি। তিনি বলেন, ‘রেলের গাফিলতির জন্যই আজকে আবার একটা ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে বহু মানুষের প্রাণ যেতে পারত। আজ এই ছোট্ট ছেলেটির জন্য বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেল।’ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আমরা ওর পাশে সবসময় আছি বলে জানান তিনি।
সিপিএম-কংগ্রেস নেতাদের সাক্ষাৎ
মুরসালিমের সঙ্গে দেখা করেন এলাকার সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিপিএম নেতা শেখ খলিল সিআইডি জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা এবং কংগ্রেস নেতা জিয়াউর রহমান চৌধুরী। তারা প্রত্যেকেই মুরসালিমকে আর্থিক সাহায্য করেন এবং ভবিষ্যতে পাশে থাকার বার্তা দেন।
বিজেপির কী বক্তব্য?
এই বিষয়ে উত্তর মালদা বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু জানান, বালকটির বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই কাঠিয়ার ডিভিশনের ডিআরএমের-এর সঙ্গে কথা বলেছি। পাশাপাশি এই বিষয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। বালকটির এই সাহসিকতার জন্য আজকে রেল বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল। আমি ছেলেটির পরিবারের পাশে রয়েছি।