তার এ রকম পরিণতি হওয়ায় এলাকায় অসন্তোষ রয়েছে। অন্য দিকে, ব্রাহ্মণী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বীরভূমের নলহাটি-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাও। ঘরবাড়ি না ভাঙলেও চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত এবং সেই সঙ্গে ঝাড়খণ্ড থেকে জল ছাড়ায় ব্রাহ্মণী নদীর জল বেড়েছে। এর মধ্যে নবগ্রামে ব্রাহ্মণী নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দেয়।
শনিবার রাতে নবগ্রামের ডাঙ্গাপাড়া ও মিল্কি গ্রামের বাসিন্দারা সেই ফাটল মেরামতের চেষ্টাও করেন। কিন্তু জলের তোড়ে বাঁধ ভেঙে যায়। বালির বস্তা ফেলে সেই ভাঙা অংশ দিয়ে জল ঢোকা বন্ধ করতে গ্রামবাসীদের সকাল হয়ে যায়। এর পর সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা আসেন। ঠিকাদারের লোকজনও ঘটনাস্থলে আসেন।
গ্রামবাসী নুরুল হোদা বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে জানিয়ে মসজিদে আজানের সময় ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাঁধের কাছে চলে আসি। সারারাত ধরে কাজ চলে। তবে পরে আর বৃষ্টি না হওয়ায় এবং নদীতে নতুন করে জল না ছাড়ায় জলের চাপ কিছুটা কম ছিল বলে সুবিধা হয়েছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও ঠিকাদারের কাছ থেকে সেই সময় কোনও বালির বস্তা পাওয়া যায়নি। তাহলে কয়েকশো বিঘা জমি নদীর জলে ডুবে যেত না।’
গ্রামবাসী ইসরাফিল শেখ বলেন, ‘বাঁধটি সঙ্গে সঙ্গে মেরামতি না করতে পারলে নবগ্রাম ব্লকের প্রায় পাঁচটি অঞ্চল ভেসে যেত। গ্রামের মানুষ বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান না থাকায় ঠিকভাবে কাজ করা যায়নি। সকালে জিনিস আসার পর স্থানীয় মানুষ আবার কাজ শুরু করেন।’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাস তিনেক ধরেই প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। যে পাশে নদী তার বিপরীত দিকে বাঁধের নীচে গাছের গুঁড়ি দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ হলেও বালির বস্তা ফেলা হয়নি। তার ফলে বাঁধের বালি মাটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে যায়। সেজন্য সামান্য জলের চাপেই বাঁধ ভেঙে যায়।’
রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডল। তিনি সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকারকে ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘আপনাদের গাফিলতির জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। বর্ষার সময় যদি বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ না করেন, পরে করে কী হবে? কীভাবে কাজ হচ্ছে, তার বিস্তারিত হিসাব দেবেন, না হলে গাছে বেঁধে রাখব। ঠিকাদারদের সঙ্গে আপনারাও টাকা নিয়ে কাজের মান খারাপ করছেন।’
পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সেচ দফতরের নজরদারির অভাবের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। বাঁধের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না।’ জেলার মুখ্য বাস্তুকার প্যারিস নন্দী বলেন, ‘তিন মাস ধরে কাজ চলছে। এখনও সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। অঘটন যে কোনও সময় ঘটতে পারে। তবে বাঁধের যে অংশ ভেঙে গিয়েছে, সেই অংশটা ভালো ভাবে মেরামতি করা হচ্ছে।’
অন্য দিকে, নলহাটি ২ ব্লকের শীতলগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রসাদপুর ও বারুনিঘাটার এলাকায় শনিবার সন্ধ্যার দিকে ব্রাহ্মণী নদীর বাঁধ প্রায় ৫০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যার ফলে প্রসাদপুর, কুন্দপাড়া, কামালপুর, বারুণীঘাটা, সাহেবনগর, ছেতুনকান্দি, কৃষ্ণপুরের, বলরামপুরের মতো বেশ কিছু গ্রাম এখনও জলমগ্ন। শনিবার রাতেই বৈধরা জলাধার থেকে প্রায় ১৬ হাজার ২০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল।
যার জেরে ব্রাহ্মণী নদীতে জলস্ফীতি ঘটে। প্রথমে নদীর পাড়ে থাকা একটি ঘর ভেঙে পড়ে। এরপরই বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে গ্রামের ভিতরে। খবর পেয়ে এলাকার স্কুলগুলিতে বন্যার্তদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। প্লাবিত এলাকায় যান জেলাশাসক বিধান রায়, রামপুরহাটের মহকুমাশাসক সাদ্দাম নাভাস, নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের
বিডিও হুমায়ুন চৌধুরী। বিডিও বলেন, ‘দু’দিনের অতিবৃষ্টির কারণেই নদীতে জল বেড়েছে। জল বাড়তে থাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। তবে জল নেমে গেলেই দ্রুত গতিতে বাঁধ সংস্কার করা হবে। যাদের মাটির বাড়ি রয়েছে, তাদের আমরা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’ রাত থেকেই কাজ শুরু করেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর ও সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা।
পঞ্চায়েত প্রধান সাহিনা খাতুন বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই গ্রামে এসেছিলাম। কিন্তু বাঁধের ধারে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় মেরামত করা সম্ভব হয়নি। রবিবার ফের জল বাড়তে শুরু করেছে। আমরা গ্রামের মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
লাগাতার বৃষ্টির জেরে এ দিন ধস নামে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের পুটিমারি পল্টন ব্রিজে ১০৬ নম্বর জাতীয় সড়কে। ফলে বিঘ্নিত হয় যান চলাচল। লাগাতার বৃষ্টির জেরে শিলিগুড়ি, ময়নাগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শহরে বহু পাড়ায় জল জমে যায়। একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় কোচবিহার এবং মালদহ শহরেও। মালদা জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা উত্তরবঙ্গের মধ্যে সর্বাধিক। মালদা মেডিক্যাল কলেজে জল ঢুকে যায়। জেলায় প্রচুর বাড়িও ভেঙে পড়ে।
জনজীবন বিপর্যস্ত। পুজোর আগে বন্যার আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে মালদায়। এ দিন বাজ পড়ে মালদার চাঁচলে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরেও বাজ পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। টানা বৃষ্টির জেরে ফের যান চলাচল ব্যাহত সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে। গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টি চলছে। শনিবার সারাদিন ধরে বৃষ্টিপাতের পরে রাতেও প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হলে কালীঝোরার কাছে শ্বেতিঝোরায় জাতীয় সড়কের একাংশ ধসে যায়।
ভোরবেলা থেকেই ওই সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় গাড়ির। কালীঝোরায় একটি ট্রাক তিস্তায় ডুবে যায়। তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে।