ঝাড়গ্রামের পুজোর বিশেষ রীতি নীতি
জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামের বিনপুর দু’নম্বর ব্লকের হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাড়দা গ্রামে সাহা ও মণ্ডল পরিবারের উদ্যোগে এই পুজো হয়ে থাকে । কেবলমাত্র পুজো বললে ভুল বলা হবে । দুর্গা পুজোর থেকেও বেশি আনন্দই মেতে উঠেন এই গ্রামের মানুষরা । ৫ দিন ধরে চলে এই পুজো আর পুজোকে কেন্দ্র করে পাঁচ দিন ধরে আয়োজন করা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। পুজোর পাশাপাশি বিশেষত্ব রয়েছে এখানকার জিলিপির । ২৫০ থেকে ৩০০ কুইন্টালেরও বেশি জিলিপি বিক্রি হয় এই লক্ষ্মীপুজোয় ।
কেন একত্রে পুজো লক্ষ্মী-সরস্বতীর?
পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে মনোজ মণ্ডল, সমীরণ সাহা -রা বলেন,’বিষ্ণুপুরাণ মতে নারায়ণের দুই স্ত্রী রয়েছে লক্ষ্মী ও সরস্বতী। তাই আমরা একজনকে ছেড়ে কীভাবে আরেকজনের পুজো করতে পারি । সে জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষের শুরু করা পুজো, লক্ষ্মী সরস্বতীর একসঙ্গে আরাধনা আজও আমরা করে চলেছি । এই বছর আমাদের পুজো ১৬১ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে । পুজোকে কেন্দ্র করে আমরা আনন্দে মেতে উঠি । আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আত্মীয়-স্বজনরা আসেন পাঁচ দিন ধরে বাড়িতে থাকেন জমিয়ে খাওয়া দাওয়া এবং পুজোর আনন্দ উপভোগ করে আমরা সবাই মিলে । পুজোকে কেন্দ্র করে পাঁচ দিন ধরে চলে নামীদামি শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রা।’
২৮ অক্টোবর থেকে লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়ে চলবে ১ নভেম্বর পর্যন্ত । পুজোর ঘট উত্তোলনের সময় বিশেষ আতসবাজিরও ব্যবস্থা থাকে প্রতি বছর। সে ব্যবস্থা করে এই পুজো কমিটি। কিন্তু, এই বছর তাতেও তারা পরিবর্তন এনেছে। এবছর শুধু পরিবেশ বান্ধব বাজির ব্যবহার হবে বলে নিশ্চিত করেছে পুজো কমিটি।
লক্ষ্মী-সরস্বতী পুজোর বিশেষ জিলিপি
লক্ষ্মী পুজোর প্রাঙ্গণে কেবলমাত্র একটি জিলিপির দোকান থাকে । নিলামের মাধ্যমে সেই দোকান নিতে হয় ব্যবসায়ীকে । উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন এই বছর ১ লাখ ৮৯ হাজার ১ টাকায় নিলামে নিয়েছেন হাড়দা গ্রামেরই এক ব্যক্তি । পুজোর এই বিশেষ জিলিপি চালগুড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়। এই জিলিপির স্বাদ সবার থেকে আলাদা । প্রতিবছর ২৫০ থেকে ৩০০ কুইন্টাল জিলিপি বিক্রি হয় এখানে।
হাড়দা লক্ষ্মীপুজো দেখার জন্য ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলার বহু মানুষ সের সমাগম হয় । উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তাদের এবারের পুজোর বাজেট রয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। হাড়দা গ্রামের বসবাস করি ৫০০টি সাহা-মন্ডল পরিবারের থেকেই এই চাঁদা দেওয়া হয়। বাইরের কারো কাছ থেকে কোন প্রকার চাঁদা আদায় করা হয় না । নিজেদের সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যেই তাদের জমির পরিমাণ, পেশা অনুযায়ী চাঁদা ধার্য করা হয় । পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিনপুর থানার পুলিশ । এই পুজো দেখার জন্য বহু পর্যটক আসে বলেও জানা গিয়েছে ।