দিলীপ ঘোষের ‘মর্নিং ওয়াক রাজনীতি’ এ বার বিজয়া সম্মিলনীর মোড়কে। যা বঙ্গ-BJPর ক্ষমতাসীন শিবিরের বিড়ম্বনা আরও বাড়াতে চলেছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবিরেরই একাংশ। কাকভোরে ইকো পার্কে হাঁটতে হাঁটতে দিলীপ সাংবাদিকদের কোনও বিস্ফোরক বাইট দিলেন কি না, এতদিন সে দিকে নজর রাখতেন সুকান্ত মজুমদাররা। এ বার তাঁদের নজর রাখতে হবে ইকো পার্কে দিলীপের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে দলের কোন কোন নেতা গুটিগুটি পায়ে সেখানে হাজির হলেন, তা নিয়েও।
আগামী পাঁচ তারিখ সকালে নিউটাউনের ইকো পার্কে হতে চলেছে দিলীপের মর্নিং ওয়াকসঙ্গীদের ডাকে বিজয়া সম্মিলনী। যেখানে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে হাজির থাকবেন স্বয়ং দিলীপ।
সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের দিলীপ অনুগামীরা পাঁচ তারিখ ভোরে ভিড় করবেন ইকো পার্কে। তাঁদের কাছে নির্দিষ্ট বার্তাও পৌঁছে গিয়েছে। ফলে ওই বিজয়া সম্মিলনী কর্মসূচির দিকে কড়া নজর রাখছে বঙ্গ-BJP নেতৃত্বও। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মিলনীর উদ্যোক্তাদের তালিকায় অবশ্য BJPর নাম-গন্ধও নেই। নিজেদের ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ রাখতেই বিক্ষুব্ধ BJP নেতারা এমন কৌশল নিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
পদ্ম শিবিরের অনেকেই বলছেন, এটা নামেই অরাজনৈতিক বিজয়া সম্মিলনী। আদপে রাজ্য BJPর ক্ষমতাসীন শিবিরের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছু না। কারণ, ইতিমধ্যে কালকাতা এবং আশপাশের জেলাগুলিতে এরকম কিছু বিজয়া সম্মিলনী হয়েছে, যেখানে মঞ্চ আলো করে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে দিলীপ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত BJP নেতাদের। কিছুদিন আগেই রাজারহাটে একটি অরাজনৈতিক বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দিলীপ জমানার দুই শীর্ষ BJP নেতা সায়ন্তন বসু এবং রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আগামী রবিবার বিক্ষুব্ধ BJP কর্মীদের আরও একটি বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। তবে সেগুলিকে ছাপিয়ে রাজনৈতিক মহলে উৎসাহ বাড়াচ্ছে দিলীপের বিজয়া সম্মিলনী কর্মসূচি। পাঁচ তারিখ ভোরে দিলীপ তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশে কী বার্তা দেন, তা নিয়েই এখন গেরুয়া শিবিরের অন্দরে সব থেকে বেশি চর্চা।
ইতিমধ্যেই মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য BJP দপ্তরে নিজের অনুগামীদের ডেকে একপ্রস্থ বিজয়া দশমী সেরে ফেলেছেন দিলীপ। সেদিনের বিজয়া সম্মিলনীতে বিক্ষুব্ধ BJP কর্মীদের ভিড় এবং দিলীপকে কেন্দ্র করে তাঁদের উচ্ছ্বাস কপালে ভাঁজ ফেলেছে দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের। সূত্রের খবর, ওই অনুষ্ঠানের পরেই সিদ্ধান্ত হয়, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে দলের বিক্ষুব্ধদের একসূত্রে বাঁধতে এরকম অনুষ্ঠান আরও করা হবে কালীপুজো পর্যন্ত। তাৎপর্যপূর্ণ হলো, পাঁচ তারিখই সল্টলেকের ইজেডসিসিতে রাজ্য BJPর উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়া সম্মিলনী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে। বুধবার দিলীপ বলেন, ‘ইকো পার্কে আমরা যাঁরা নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করি তাঁরা সকলে মিলে একটি বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছি। খবর পেয়ে সেখানে BJP নেতা-কর্মীরা চলে আসতে পারেন। তাঁদের তো আসতে নিষেধ করা যায় না। আমার তরফ থেকে সবাইকে স্বাগত।’ রাজ্য BJP মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর মন্তব্য, ‘দিলীপবাবু দলের সাংসদ এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। তিনি বিজয়া সম্মিলনী করতেই পারেন। কোনও সমস্যা নেই।’