সেপটিক ট্যাঙ্কে ঠাকুমা-নাতির কঙ্কাল, সোনারপুরের ঘটনায় ঘনাচ্ছে রহস্য – dead bodies of grandmother and grandson recovered from septic tank in rajpur sonarpur municipality


এই সময়, সোনারপুর: জরাজীর্ণ বাড়ি। চারপাশে দারিদ্রের ছাপ। কেবল বাড়ির পিছনে সেপটিক ট্যাঙ্কে সিমেন্ট-বালির নতুন প্রলেপ। তা দেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। সেপটিক ট্যাঙ্ক খুলতেই চারপাশ দুর্গন্ধে ভরে যায়। ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে বের করা হয় দু’টি নরকঙ্কাল। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে কঙ্কাল দু’টি ঠাকুমা-নাতির। পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যাঁরা সম্পর্কে নিহত বৃদ্ধার নাতনি ও নাতজামাই।

রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পণ্ডিতপাড়ায় এ দিন কঙ্কাল উদ্ধারের পর প্রতিবেশীদের ভিড় উপচে পড়ে। বাড়িটি পান্নালাল দাসের। পান্নালালের বয়স আশি ছাড়িয়েছে। ভালো করে হাঁটাচলা করতে পারেন না। স্ত্রী গঙ্গারানি (৬৫) ও নাতি মহাদেব দাসকে (২৫) নিয়ে থাকতেন পান্নালাল। পান্নালালের ছেলে-বৌমা অনেক দিন আগেই গত হয়েছেন। তাঁদের ছেলে মহাদেব।

মহাদেব বিশেষ ভাবে সক্ষম। ঠাকুর্দা-ঠাকুমার সঙ্গে থাকতেন। মাস ছয়েক আগে পান্নালাল-গঙ্গারানি-মহাদেবদের সংসারে এসে জোটে প্রিয়াঙ্কা দাস ও শান্তনু দাস। প্রিয়াঙ্কা পান্নালালের মেয়ের মেয়ে। অর্থাৎ নাতনি। শান্তনু নাতজামাই। পান্নালালের মেয়ে অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কার মায়ের সঙ্গে বাপের বাড়ির যোগাযোগ চুকেছে দীর্ঘদিন। বাড়ির অমতে বিয়ে করার পর মেয়ে আর বাপের বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। সেই মেয়ের মেয়ে-জামাই হঠাৎ দাদু-দিদাকে শেষ বয়সে দেখতে হবে বলে পণ্ডিতপাড়ায় পান্নালালের বাড়িতে এসে ওঠে।

পান্নালালের এক শ্যালিকা নিয়মিত দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। কিন্তু মাস দেড়েক আগে যখন এসেছিলেন, তখন তাঁকে ঘরেই ঢুকতে দেয়নি প্রিয়াঙ্কা-শান্তনু। ফিরে যান বৃদ্ধা। এ দিন ফের দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে দেখা করতে আসেন তিনি। এ বারও একই ব্যবহার পান। প্রিয়াঙ্কা উল্টোপাল্টা কথা বলে বৃদ্ধাকে বের করে দেয়। কেমন সন্দেহ হয় পান্নালালের শ্যালিকার।

দিদি-জামাইবাবু ঠিক আছে তো? প্রশ্ন জাগে মনে। ঘরে ঢুকতে না পেরে বিষয়টি তিনি পড়শিদের জানান। পড়শিরাই পরামর্শ দেন পুলিশে যাওয়ার। বৃদ্ধা সোনারপুর থানায় যান। সোনারপুর থেকে পুলিশ আসে পান্নালালের বাড়িতে। তখন আর বাধা দেওয়ার উপায় ছিল না প্রিয়াঙ্কা-শান্তনুর। পুলিশ ঘরে ঢুকে দেখে বাড়িতে বৃদ্ধ পান্নালাল ও প্রিয়াঙ্কা-শান্তনু থাকলেও, নেই গঙ্গারানি ও মহাদেব।

তা নিয়ে প্রশ্ন করলে অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে প্রিয়াঙ্কা-শান্তনু। তারা দাবি করে, ঠাকুমা-নাতি না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে বলে যায়নি। পুলিশের প্রশ্ন ছিল, থানায় কি খবর দেওয়া হয়েছিল? উত্তর দিতে পারেনি প্রিয়াঙ্কা। এরপর গোটা বাড়ি তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। তখনই বাড়ির পিছনে সেপটিক ট্যাঙ্কটি সিমেন্ট-বালি দিয়ে মেরামত করা দেখে সন্দেহ হয়। যেখানে বাড়ি ভেঙে পড়ছে সেখানে সেপটিক ট্যাঙ্কে হঠাৎ এত নজর?

এরপরেই সেপটিক ট্যাঙ্কটি খোলা হয়। প্রবল দুর্গন্ধ বেরিয়ে আসে। ট্যাঙ্কে নেমে দু’টি কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রিয়াঙ্কা-শান্তনুকে। তারা জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, ওই কঙ্কাল দু’টি গঙ্গারানি-মহাদেবের। পুলিশ কঙ্কাল দু’টি ফরেন্সিক টেস্টের জন্য পাঠিয়েছে।

কেন খুন? তদন্তে উঠে এসেছে বাড়টি নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য প্রিয়াঙ্কা দাদু-ঠাকুমাকে চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু গঙ্গারানি রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে একদিন বিবাদ চরমে ওঠে। রাগের মাথায় প্রিয়াঙ্কা-শান্তনু লোহার রড দিয়ে বৃদ্ধার মাথায় মারে। সঙ্গে সঙ্গে মারা যান গঙ্গারানি। যা দেখে ফেলেছিলেন মহাদেব। তাঁরও একই পরিণতি হয়। লোহার রড দিয়ে মেরে খুন করা হয় মহাদেবকেও। এরপর দেহ দু’টি রাতের অন্ধকারে সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়ে আসে প্রিয়াঙ্কা-শান্তনু। পরে যাতে গন্ধ না ছড়ায় তাই সেপটিক ট্যাঙ্কের মুখ বালি-সিমেন্ট দিয়ে ভালো করে বুজিয়ে দেয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *