Kolkata Flat : নিউ টাউনটাও শেষে কিনা বিজ়ি ‘গড়িয়াহাট’ হয়ে গেল! – new town also gradually became a busy place like gariahat residents of the flat are regretting


এই সময়: যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন কলকাতাটা সল্টলেকের সীমানা ছাড়িয়ে আড়ে-বহরে হুড়মুড়িয়ে বাড়তে শুরু করেনি। বিশ্ববাংলা সরণি তখনও তৈরিই হয়নি। নজরুল তীর্থ বা তার আশপাশের বড় বাণিজ্যিক হাইরাইজ়ের স্বপ্ন দেখতেন না এলাকাবাসী। সেই ২০০৪ সালে তৈরি হয়েছিল ‘অনিমিখা আবাসন’।

নিউ টাউন তখনও এমন ‘আলট্রা মর্ডান’ উপনগরী হয়ে ওঠেনি। কিন্তু তখন সবুজ ছিল, খোলা আকাশ ছিল, সকালে-বিকেলে মেঠো রাস্তায় হাঁটা ছিল। কাট টু ২০২৩। ১৭৬ ফ্ল্যাটের আবাসনটির বাসিন্দাদের এখন দুঃখ – সেই নিউ টাউনও শেষে গড়িয়াহাটের মতো বিজ়ি, ভিড়ে ঠাসা হয়ে গেল! তবে আবাসন নিয়ে গর্বটা থেকেই গিয়েছে আবাসিকদের। কারণ, সেটা আক্ষরিক অর্থেই ‘বারো ঘর এক উঠোন’। সকলের সুখে-দুঃখে একে অন্যের পাশে থাকাটাই এই আবাসনের ‘ইউএসপি’।

আবাসিক রীতা গঙ্গোপাধ্যায়, অমৃতা মণ্ডলরা বলেন, ‘আমরা যখন এখানে আসি, তখন এলাকাটা পুরো ফাঁকা। একটা বাদে কোনও আবাসন তৈরি হয়নি। আমরা এসেছিলাম একেবারে গোড়ার দিকে। তারপর ধীরে ধীরে পুরো আবাসনই ভরে গেল।’ বাসিন্দা আলো মুখোপাধ্যায়, অঞ্জনা পালদের কথায়, ‘আবাসনে আমাদের দুই প্রজন্ম হয়ে গেল। ফলে আমরা একাত্ম হতে পেরেছি। পুজো থেকে দীপাবলি, নববর্ষ, দোল – সবই আয়োজন হয় নিষ্ঠাভরে। যে কোনও অনুষ্ঠানে সকলেই হাত লাগায়।’

তবে নিউ টাউনটা ‘গড়িয়াহাট’ হলেও এই আবাসনে এখনও প্রচুর সবুজ। আছে বাচ্চাদের পার্ক, খেলার মাঠ, কেয়ারি করা বাগান আর ইন্ডোর গেমের ব্যবস্থা। বিভিন্ন মাপের ফ্ল্যাট, নানা পেশার মানুষ, ভাষাও আলাদা – তবে আবাসন পরিচালনায় বাধা হয়নি কিছুই। ঐকমত্যে পৌঁছনোটাই যেন সেখানকার সংস্কৃতি। বাজি পোড়ানোর বিরোধিতা থেকে ডেঙ্গি-সচেতনতা চালান প্রবীণ-নবীন আবাসিকের দল।

তবু যেন আধুনিক প্রজন্মের আফশোসটা যেতে চায় না। চারদিকের সবুজ মুছে কংক্রিটের খোপ বাড়ছে – এ নিয়ে তাঁদের যথেষ্ট আপত্তি। শৌর্য বসু, ঋতঙ্কর মহাপাত্ররা বলছেন, ‘এটা তো আবাসিক এলাকা। কিন্তু যে ভাবে একের পর এক দোকান-বাজার, ত্রিপল খাটিয়ে মেলা, আবাসনের পাঁচিল ঘেঁষে খাবারের দোকান তৈরি হচ্ছে, তাতে এটা আর আবাসিক এলাকা থাকছে না। এক চিলতে মাটিও যদি সবুজের জন্য ছেড়ে না রাখা হয়, তা হলে আগামী দিন কি খুব সুখের হবে?’ তবে অনেক ভালো কাজও যে হয়েছে, তা-ও মানছেন এঁরা। যেমন, বিশ্ববাংলা সরণি পারাপারের জন্য সাবওয়ে হওয়ায় দুর্ঘটনা প্রায় শূন্যে নেমেছে।

কিন্তু যা নিয়ে আবাসনের সকলে তিতিবিরক্ত, সেটা হলো দিন-রাতের ‘ক্যাকোফোনি’। শব্দের বিরাম নেই। সৌরভ ভট্টাচার্য নামে এক আবাসিক বলেন, ‘বড় রাস্তায় বাস-লরির হর্ন তো ছিলই, এখন আবসনের সামনে সার্ভিস রোডেও বড় গাড়ি ঢুকছে। তাতে যানজট বাড়ছে, আর বাড়ছে হর্নের অত্যাচার। মানসিক শান্তির দফারফা।’ এই তাণ্ডব থেকে রেহাই পেতে বেশিরভাগ আবাসিকই জানলার কাচ খুলে ফেলে ফ্ল্যাট ‘সাউন্ডপ্রুফ’ করাচ্ছেন। এতে শব্দ-দৈত্যের থেকে রেহাই মেলে ঠিকই, কিন্তু দু’দণ্ডের জন্য জানলাটা আর আকাশ দেখা যায় না।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *