জিভে জল আনা বারুইপুরের সেই ডাঁসা পেয়ারাগুলিও কিন্তু পারল না বিজেপি বিধায়কদের রণংদেহি মেজাজ ঠান্ডা করতে। অধিবেশনের প্রথম অর্ধের শেষে গেরুয়া বিধায়কদের ঘোষণা, তাঁরা ওই পেয়ারা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিধানসভার ইতিহাসে অতীতে অনেক কিছুই বয়কট করেছে বিরোধীরা। কিন্তু পেয়ারা-বয়কট? সম্ভবত এই প্রথম।
তবুও পেয়ারা এল বিজেপি বিধায়কদের ঘরে। এক ট্রে বারুইপুরের ডাঁসা পেয়ারা। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সব বিজেপি বিধায়কের নামে নামে সেই পেয়ারা পাঠিয়েছেন। কিন্তু বিজেপির সচেতক মনোজ টিগ্গা অনড়। তিনি কিছুতেই অধ্যক্ষের দেওয়া পেয়ারা গ্রহণ করবেন না। দলের অন্যান্য বিধায়কদেরও করতে দেবেন না। তাঁর সঙ্গে সহমত আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলও। মনোজ জানালেন, এটাই বিজেপির পরিষদীয় দলের সিদ্ধান্ত। কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক সৌজন্য দেখানোর পক্ষে থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন না।
অতএব ট্রে ভর্তি সেই ডাঁসা পেয়ারা ফেরত গেল বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে। মনোজ বললেন, ‘অধ্যক্ষ আমাদের বিধানসভায় কথা বলতে দেন না। কণ্ঠরোধ করেন। শুভেন্দু অধিকারীকে অন্যায় ভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেই অধ্যক্ষের দেওয়া বারুইপুরের পেয়ারা আমরা বয়কট করলাম।’ অগ্নিমিত্রার কথায়, ‘পেয়ারা লাগবে না। উনি আমাদের বিধানসভায় কথা বলতে দিন, তা হলেই হবে। অধ্যক্ষ আমাদের পেয়ারা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেই পেয়ারা আমরা বয়কট করছি।’
তবে বিধানসভার অলিন্দে এ দিন জোর চর্চা, বারুইপুরের ডাঁসা পেয়ারা কি ফাটল ধরিয়েছে বিজেপির অন্দরে? কারণ বিজেপির পেয়ারা-বয়কটের সিদ্ধান্ত জানাজানি হতেই তৃণমূল বিধায়কদের একাংশের দাবি, বেশ কয়েকজন বিরোধী বিধায়ক বাড়ি ফেরার আগে চুপিচুপি অধ্যক্ষের ঘরে এসে পেয়ারা নিয়ে গিয়েছেন। এক তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘বিজেপি পেয়ারা বয়কট করেছে নাকি!
আমি তো দেখলাম এক বিজেপি বিধায়ক অধ্যক্ষের অফিস থেকে বেছে বেছে পেয়ারা নিচ্ছেন।’ পত্রপাঠ সেই অভিযোগ খারিজ করেছে বিজেপির পরিষদীয় দল। মনোজ বলেন, ‘বিধানসভায় কয়েকজন বিধায়ক আছেন, যাঁরা বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। অথচ তাঁদের বিজেপি বিধায়ক হিসেবেই বিবেচনা করেন বিধানসভার অধ্যক্ষ। তাঁদের মধ্যেই কেউ হয়তো পেয়ারা নিয়েছেন। আমরা কেউ পেয়ারা নিইনি, সেটা হলফ করে বলতে পারি।’
সব কিছুর সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে দেওয়া কি ঠিক? এই প্রশ্নটা বহু যুগের। এ দিন বিজেপির এক বিধায়কও ঘনিষ্ঠ মহলে সেই প্রশ্ন তুললেন। তাঁর কথায়, ‘এর পর আমরা নিজেদের বাগানের কোনও ফলমূল নিয়ে এলে তৃণমূল বয়কট করবে। এই ভাবেই চলতে থাকবে। সব কিছু নিয়েই রাজনীতি হবে? তা ছাড়া পেয়ারা তো দিয়েছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ, সেটা বয়কট করা কি ঠিক হলো?’