দিনক্ষণ চূড়ান্ত, ২২ জানুয়ারি সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অযোধ্যার রামমন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে চলেছে এই দিন। আদালত, বিতর্ক, দীর্ঘ লড়াই-অনেকটা গল্প বুকের চারপাশে জড়িয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে মন্দিরটি। আর সেই অযোধ্যার মন্দিরে রাম মূর্তি তৈরি হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার জামালউদ্দিনের হাতে। দিন রাত এক করে প্রায় ১৭ ফুট উচ্চতার রামমূর্তি তৈরি করেছেন তিনি। ধর্ম আর বিভাজনের জটিল রেখাকে সরিয়ে ভালোবাসা-সম্প্রীতি-শিল্পের এক সহজ-সরল বৃত্ত তৈরি করেছেন এই বঙ্গ সন্তান। জামালউদ্দিনের হাতে তৈরি সেই মূর্তিই বসবে অযোধ্যার রাম মন্দিরে। তবে তা কোথায় বসবে? তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
এই খবর এলাকায় জানাজানি হতেই কেউ কেউ অল্প স্বল্প অবাক হচ্ছেন। কিন্তু, ওই যে সহজ হিসেব- জামালউদ্দিনের কণ্ঠে তখন, ‘ধর্ম যার যার, শিল্পী সবার’। উত্তর ২৪ পরগনা দত্তপুকুর এলাকায় অবস্থিত ‘বিট্টু ফাইবার গ্লাস’। এই প্রতিষ্ঠানটির সুখ্যাতি ছড়িয়েছে বহুদূর পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠানেরই কর্ণধার জামালউদ্দিন। নিজের হাতে মূর্তি খোদাই করেন তিনি। সঙ্গী ছেলে বিট্টু।
অযোধ্যার রাম মন্দির থেকে যখন তাঁর কাছে মূর্তি বানানোর অর্ডার আসে তিনি কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। এত বড় দায়িত্ব…তবে কাঁধে নিতে পিছপা হননি তিনি। এরপর দিন রাত এক করে খেটেছেন জামালউদ্দিন এবং বিট্টু। তাঁদের হাতেই ধীরে ধীরে রূপ পেয়েছে রাম মূর্তি। ইতিমধ্যেই দুটি মূর্তি তারা পাঠিয়েছে অযোধ্যায়। এর মধ্যে একটি মূর্তির দাম দুই লাখ ৮০ হাজার, অপরটির আড়াই লাখ।
জামালউদ্দিন বলেন, ‘প্রথমে অগ্রিম দিয়ে আমার কাছে মূর্তি বুক করে দিয়েছিলেন। এরপর ডেলিভারির আগে কয়েকজন এসেছিলেন এবং বাসারতের একটি হোটেলে ২০ থেকে ২৫ দিন ছিলেন। এরপর কাজ শেষ হলে রাম মূর্তি সঙ্গে নিয়ে চলে যান।’
ধর্ম দিয়ে শিল্প এবং শিল্পীর মাঝে কোনও প্রচীর তুলতে নারাজ তিনি। বরং বঙ্গ এই শিল্পী বেশ খুশি। তিনি বলেন, ‘ধর্মকে মানবতা এবং শিল্পের উপরে রাখি না। হয়তো আমাদের কাজ কোনও একদিন দেশের গণ্ডি টপকে বিদেশে পৌঁছবে।’
শুধু জামালউদ্দিন নয়, অযোধ্যার বুকে তৈরি হওয়া রাম মন্দিরে রয়েছে আরও বঙ্গ সন্তানের হাত। দত্তপুকুরের বাসিন্দা সৌরভ রায় আপাতত রয়েছেন আযোধ্যাতেই। বাড়িতে কাউকেই তিনি জানাননি নিজের কর্মযজ্ঞের কথা। সৌরভ দীর্ঘদিন ধরেই ফাইবারে কাজ করেন দত্তপুকুরের এক কারখানায়। সেখান থেকেই তাঁকে পাঠানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশে।
এই সময় ডিজিটাল-কে ভিডিয়ো কলে তিনি বলেন, ‘এখানে পুরোদম কাজ চলছে। তা শেষ করেই বাড়ি ফিরব।’ এদিকে রাম মন্দির নির্মাণে ছেলের সামান্যতম অবদানই অনেক বড় প্রাপ্তি, বলছেন সৌরভের মা-বাবা।