পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস হাইকমান্ড কাদের সঙ্গে জোট করবে, সে দিকে নজর রাখলেও ৭ জানুয়ারি ডিওয়াইএফআইয়ের ব্রিগেড সমাবেশের পরেই বঙ্গ-সিপিএম নিজেদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে চলেছে। বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির মধ্যে লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে সিপিএম একা সাধারণত ৩২টি আসনে লড়াই করে।
সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই ডায়মন্ড হারবার-সহ কয়েকটি আসন বাদে বাকি কেন্দ্রগুলিতে নিজেদের প্রার্থীর নাম ব্রিগেড সমাবেশের পরেই চূড়ান্ত করতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে রাহুল গান্ধীর একপাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্যদিকে সীতারাম ইয়েচুরি ছিলেন। তবে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত এ রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তায় যেতে পারে বলেই সিপিএম নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ।
দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’ বৈঠকের সময়েই কংগ্রেসকে বহরমপুর ও মালদা দক্ষিণ আসন ছেড়ে দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন মমতা। যদিও অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেস দু’টি আসনে সন্তুষ্ট নয়। প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে জোটেরও পক্ষপাতী নয়। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে। যদিও তৃণমূলের প্রস্তাব মেনে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সিট-শেয়ারিং যে সম্পূর্ণ করা যাবে না– কংগ্রেস হাইকমান্ড তা স্পষ্ট করেছে।
এআইসিসি পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে কবে অবস্থান স্পষ্ট করবে? কাদের সঙ্গে জোট করবে?–এ নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষায় না থেকে সিপিএম নিজের ঘর গুছিয়ে রাখতে চাইছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করে। এটাই কংগ্রেসের চিরকালের রেওয়াজ। কংগ্রেস হাইকমান্ড কী করবে, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের প্রার্থী তালিকাও ব্রিগেডের পর চূড়ান্ত করা হবে।’
কংগ্রেস যদি তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তায় যায়, সে ক্ষেত্রে বামেরা নওশাদ সিদ্দিকির নেতৃত্বাধীন আইএসএফ-র সঙ্গে জোটের পথে হাঁটতে পারে। ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হতে চান বলে নওশাদ একাধিক বার প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন। ব্রিগেডের পরই আলিমুদ্দিন স্ট্রিট আইএসএফ নেতৃত্বের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলা শুরু করবে। এই প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার থেকে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে।
বৈঠকে ইনসাফ-যাত্রার পর্যালোচনা, আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি এবং ২০২৪-এর দিকে তাকিয়ে সিপিএমের প্রচারের অভিমুখ নিয়ে আলোচনা হবে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘নতুন বছরে কী আন্দোলন কর্মসূচি হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। কিছু দিন আগে হওয়া বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত কতটা রূপায়িত হয়েছে, তা নিয়েও আলোচনা হবে। কিছু সাংগঠনিক বিষয়েও আলোচনা হবে।’
রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে গোপালন ভবনের তরফে সংযোগ-রক্ষা করেন খোদ সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএমের দিল্লির নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে কতটা লাভ-লোকসান, তা নিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড অঙ্ক কষছে। সেই কারণেই মমতা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সিট-শেয়ারিং সম্পূর্ণ করতে চাইলেও রাহুল-খাড়গে ধীরে চলো লাইন নিয়েছেন।
কংগ্রেস এই কৌশল নিলেও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট নিজেদের ঘর গুছিয়ে রাখতে ব্রিগেডের পরেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে মাঠে নামতে চায়।