দু’দশক আগে হিরে থেকে জিরে সবই পাচার হতো বাংলাদেশে। বিএসএফ-এর নজরদারি ফাঁকি দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকে পাচার করাটাই তখন ছিল দস্তুর। সেখানে প্রতিযোগিতাও বেশি। ফলে তরুণ শাহজাহান সুচতুর ভাবেই বেছে নিয়েছিলেন নদী পথ। কারণ, নদী পথে পাহারা-নজরদারি ছিল অনেক ঢিলেঢালা। স্থানীয় লোকেরা বলেন, বাংলাদেশের চোরাই পোশাক চোরাপথে ঢুকে পড়ত এপারে।
সেই পোশাক বাজার মূল্যের থেকে অনেক কম দামে চলে যেত পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। পোশাকের মধ্যে নাকি পাচার হতো মাদকও। সেই কারবারেই ফুলেফেঁপে ওঠার শুরু শাহজাহানের। পরবর্তীকালে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এলাকার ভেড়ির দখলদারি ও তোলাবাজি। সিপিএম নেতা তথা স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান মোসলেম শেখের ছত্রছায়ায় শাহজাহানের হাতেখড়ি।
এলাকায় কান পাতলে এখনও শোনা যায়, হাওয়ালা ও হুন্ডির কারবারেও নাম জড়িয়েছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই নেতার। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই নাকি তা জানতেন, জানত পুলিশও। তবে কী বাম, কী ডান—কোনও আমলেই পুলিশ সেভাবে ছোঁয়ার সাহস করেনি এই নেতাকে। বাম আমলের শেষ দিকে পোশাক ও মাদকের কারবারের অভিযোগ ওঠায় পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে তা থামিয়ে দেওয়া হয়।
এই শাহজাহানের নামে এক সময়ে একাধিক অভিযোগ করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল। বিপদ আঁচ করেই পালা বদলের পরে ধীরে ধীরে সিপিএমের সঙ্গ ত্যাগ করেন শাহজাহান। এই সময়ে নিজের ভাবমূর্তিও অনেকটাই বদলে ফেলেন। দান-ধ্যানের মাধ্যমে সরবেড়িয়ার মসিহা হয়ে ওঠেন তিনি।
অভিযোগ নিজের নামে বিশাল বাজারও তৈরি করেন শাহজাহান। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিঘের পর বিঘে জমি কেনেন। মাছের আড়তের ব্যবসাও বাড়িয়ে ফেলেন। পাশাপাশি তৈরি করেন বেশ কিছু ইটভাটাও। সবই কার্যত বৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে। ফলে এখন সাদা পথেই শাহজাহানের আয় বিশাল। ২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে, তিনি নাকি পুরোনো কারবার ফের নতুন করে শুরু করেছিলেন। সন্দেশখালির পাশপাশি এখনও নদী পথের বেতাজ বাদশা নাকি তিনিই।