সতীদাহ বন্ধের জন্য লড়াই চালিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়। সেটা ১৮২৭ সাল। তার ১৯৭ বছর পরেও রামমোহন রায়ের আদর্শ নিয়ে পথ চলছেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। রামমোহনেরই জন্মভিটে হুগলির খানাকুলের মাঝপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় গত কয়েক দশক ধরে বাল্যবিবাহ, শিশু নির্যাতন, মোবাইল থেকে শিশুদের দূরে সরিয়ে রাখার মতো সামাজিক বার্তা প্রচার করে আসছেন। পরিবেশ বাঁচাতে গাছ লাগানোর কথাও বলছেন তিনি।
সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে ও বাচ্চাদের আনন্দ দিতে নিজেকে বহুরূপীর সাজে সাজিয়ে তোলেন এই প্রধান শিক্ষক। হেঁটে চলে গিয়েছেন দিল্লিতে। সংসদে গিয়ে প্রচার করছেন। এছাড়া পুরী, দিঘা সমেত যে কোনও জনবহুল এলাকায় গিয়ে প্রচার করেন তিনি। তাঁর মতে, যেখানে জনসমাগম রয়েছে সেখানে প্রচারে লাভ হয় বেশি।
এই লক্ষ্যেই রাম মন্দির উদ্বোধনে আগামী ২২ তারিখ অযোধ্যায় পৌঁছবেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। সেখানে দেশের প্রতিটি রাজ্য থেকে কয়েক লক্ষ লোক আসবেন। তাই এবার প্রচারের জন্য তিনি বেঁছে নিয়েছেন অযোধ্যাকে। তিন দিন আগে খানাকুলে রামমোহনের জন্মভিটে থেকে হেঁটে আযোধ্যার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন দেবাশিস। রবিবার বিকেলে তিনি এসে পৌঁছন পানাগড়ে। রাতে পানাগড়ে থেকে আজ সোমবার সকালে ফেরে যাত্রা শুরু করবেন। হেঁটে গেলে রাস্তায় বহু মানুষের সঙ্গে দেখা হবে। তাঁদের কাছে প্রচারের জন্য শরীরের সামনে ও পিছনে ফ্লেক্স ও জাতীয় পতাকা বেঁধে হাঁটছেন।
স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রচার নেশা এই শিক্ষকের। গ্রামীণ মেলা হোক কিংবা খেলার মাঠ, যেখানে লোকের ভিড় সেখানেই বহুরূপী সাজে দেখা যায় তাঁকে। তবে এবার সাধারণ পোশাকে হেঁটে যাচ্ছেন। বহুরূপীর পোশাক সঙ্গে নিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা, অযোধ্যায় পৌঁছে বহুরূপী সেজে প্রচার করবেন।
আরামবাগের তিলকচক গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের সংসারে স্ত্রী ছাড়া রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁর প্রথম দিল্লি সফরের সময়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন স্ত্রী কাবেরী। কিন্তু পরে তিনিও উৎসাহিত করেছেন।
দেবাশিসের কথায়, ‘প্রচারের সুফল ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা দেখে এখন আর কেউ আপত্তি করে না, বরং উৎসাহিত করে। আমার ছেলে দীপতম বি-টেক পড়ছে কলকাতায়। মাঝেমধ্যে প্রচারে ছেলেও অংশ নেয়। শুধু পরিবার নয়, অভিভাবক ও আমার সহকর্মীরাও এই কাজে আমাকে উৎসাহিত করেন।’ জানান, পরিবেশ বাঁচাতে প্রতি বছর এক হাজার চারাগাছ বসান তিনি। গাছ বসানোর জন্য স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করেন।