দুর্ঘটনার পর একদিকে যেমন যশোহর রোড সম্প্রসারণের দাবি উঠেছে, তেমনই সকালের দিকে বিশেষ করে স্কুলের সময় ট্রাক চলাচলের ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। যশোহর রোডের সম্প্রসারণের দাবি তুলেছেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠও।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই যশোহর রোড। বাংলাদেশের যশোহর পর্যন্ত গিয়েছে এই রাস্তা। এই রাস্তাতেই পড়ে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বনগাঁর পেট্রাপোল। দু’দেশের বাণিজ্যে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক যাতায়াত এই রোড ধরে। কিন্তু যশোহর রোড একেবারেই অপ্রশস্ত হয়ে রয়েছে। ফলে হাবরা, অশোকনগর-সহ সীমান্ত শহর বনগাঁ শহরে যানজট লেগেই থাকে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। প্রাণও যাচ্ছে।
সম্প্রতি যশোহর রোডে বনগাঁর বিএসএফের ক্যাম্প মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় জয়পুরের বাসিন্দা মা ও ছেলের। দুর্ঘটনার পর কয়েকদিন ট্র্যাফিক পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়েছিল। তারপর যে কী সেই। ফের শুরু হয়ে যায় বেপরোয়া ট্রাকের যাতায়াত। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা এতটাই সরু যে দুটো ট্রাক পাশাপাশি যেতে পারে না। ফলে সামান্য ভুলচুকে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
বনগাঁ শহরে যশোহর রোডের ধারে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন বড় বড় সব গাছ। সেই গাছ কেটে যশোহর রোড সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু গাছ কাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন মানবাধিকার সংগঠন ও পরিবেশপ্রেমীরা। মামলা গড়ায় আদালতে। তারপর থমকেই গিয়েছে যশোহর রোড সম্প্রসারণের কাজ।
এর পাশাপাশি রয়েছে ট্রাকের দাপাদাপি। অপ্রশস্ত যশোহর রোড ধরে কেন সকালের দিকে স্কুলের সময় ট্রাক চলবে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। বনগাঁ শহরে যশোহর রোডের উপরেই রয়েছে একাধিক স্কুল। অথচ স্কুলের সময় ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারি তেমন থাকে না বলেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। আর একটি সমস্যার কথা উঠে এসেছে- ট্রাকের পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে শহরে রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে থাকে ট্রাক। যার জেরে যশোহর রোড আরও অপ্রশস্ত হয়ে পড়ছে। যানজট বাড়ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনাও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার পর এখন কয়েকদিন কড়াকড়ি থাকবে। তারপর আবার ফিরে আসবে আগের পরিস্থিতি। এই অবস্থার স্থায়ী সমাধান চাইছেন এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সকালের দিকে ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার দাবি উঠেছে।
যশোহর রোড সম্প্রসারণের পক্ষেই সওয়াল করেছেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ। তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে শহরের মধ্যে যশোহর রোড সম্প্রসারণ হওয়া দরকার। বিষয়টি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে বনগাঁর বাসিন্দাদের।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের স্কুলগুলির সামনে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হচ্ছে।’