জীবনের কঠিনতম সময়ে ধরার জন্য একটা হাত চেয়েছিলেন হালিশহরের বাসিন্দা ঝরনা ভট্টাচার্য। বদলে পেয়েছিলেন ছোট্ট একটা থাবা। পোষ্য চিকু তাঁর বিধ্বস্ত জীবনে এসেছিল আশীর্বাদ হয়ে। বইমেলায় নিজের জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে লেখা বইয়ের উদ্বোধন তাই কোনও বিখ্যাত ব্যক্তির হাতে নয়-চিকুর হাতে, থুড়ি থাবাতেই।
টানা ১৭ বছর প্রচণ্ড গার্হস্থ্য হিংসা কার্যত ভেঙেচুরে দিয়েছিল ঝরনাকে। জীবনে প্রাপ্তি হিসেবে ছিল শুধুই মেয়ে তিন্নি ওরফে স্নিগ্ধা। ২০২৩-এর অগস্টে মা-মেয়ের জীবনে আবির্ভাব হয় এমন একজনের, যাকে বাদ দিয়ে আজ আর একটা মুহূর্তও কাটানোর কথা ভাবতে পারেন না ওঁরা। ১৭ বছরের ট্রমা ওঁদের জীবনে যে ভয়াবহ রেখা ফেলেছে, সেটা ভুলে যাওয়ার নয়। তবে ছোট্ট চিকু এই কয়েক মাসেই ওঁদের অনেকটা ‘স্বাভাবিক’ করে তুলেছে।
বইমেলায় নিজের জীবনের নানা ঘটনাকে গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেছিলেন ঝরনা। তবে বই প্রকাশ করলেই তো হলো না, কার হাত দিয়ে ওই শুভ কাজটি সম্পন্ন করবেন, সেটাই ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না ওঁরা। তারপরই মনে পড়ে চিকুর কথা। হ্যাঁ, ‘স্মৃতির অতলে’ বইটি বইমেলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করতে চলেছে ওঁদের প্রিয় কুকুর চিকুই।
কোনও সেলিব্রিটির বদলে প্রিয় পোষ্যকে দিয়ে বই উদ্বোধনের এমন পরিকল্পনা কেন? সেই প্রশ্নের জবাবে ঝরনা বলছেন, ‘টানা ১৭ বছর চরম অত্যাচার সহ্য করার পর শেষ পর্যন্ত স্বামীর ঘর ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। একটা সময়ে মনে হয়েছিল হয়তো কোনও দিনই আর আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারব না। আমার মেয়ে খুবই শক্ত ধাতের। তবু, ওই স্মৃতি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না।’
এমনই পরিস্থিতিতে বাড়িতে আসে ছোট্ট চিকু। ঝরনা বলছেন, ‘চিকুর বাড়িতে আসা যেন অনেকটা একটা শিশুর বাড়ি আসার মতো। পরের কয়েক মাস আমাদের গোটা পৃথিবীটাই চিকুর চারদিকে ঘুরেছে। আমার নতুন বইয়ের উৎসর্গপত্রেও তাই চিকুর নাম রয়েছে।’ ঝরনা জানিয়েছেন, নতুন বই ছেপে আসার পর সেটা চিকুকে দেখানো হয়েছে। বাকি শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।
প্রিয় পোষ্যকে দিয়ে বই উদ্বোধন! শুনে রীতিমতো খুশি পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালসের (পেটা) পূর্বাঞ্চলীয় শাখার বিয়াস মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘পোষ্যরা স্ট্রেস বাস্টার হিসেবে অতুলনীয়। বহু মানুষ ওদের সান্নিধ্য পেয়ে নানা ধরনের মানসিক চাপ সহজে কাটিয়ে উঠেছেন। ঝরনা ঘটনাও ঠিকই। তবে উনি যে ভাবে চিকুকে দিয়ে বই উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন-তেমন ঘটনা আমার জানা নেই। ওঁকে আমার শুভেচ্ছা।’