গত শনিবার, ২৭ জানুয়ারি নরেন্দ্রপুরের বলরামপুর হাইস্কুলে ঢুকে একদল বহিরাগতের চালানো হামলায় আহত হন কয়েক জন শিক্ষক, সম্ভ্রমহানি করা হয় শিক্ষিকাদের। নিগৃহীত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এফআইআরে নাম রয়েছে স্কুলের প্রধানশিক্ষক, স্থানীয় বনহুগলি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য এবং স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দু’জন সদস্যের। ওই চার জনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে সোমবার হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়।
এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে বারুইপুর পুলিশ জেলার এসপি পলাশচন্দ্র ঢালি ভার্চুয়ালি হাজিরা দিয়ে জানান, এফআইআরে নাম থাকা দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু বিচারপতির বক্তব্য, ‘মাধ্যমিক শুরু হওয়ার আগে গ্রেপ্তার করুন। পঞ্চায়েত সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ছেড়ে রাখা যাবে না। তা হলে পরীক্ষার সময়ে গোলমাল হতে পারে।’
আবার বলরামপুর স্কুলের নিগৃহীত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফে দাবি, ধৃত ওই দু’জনের নাম এফআইআরে নেই, পুলিশ হয়তো তদন্তে অভিযুক্ত হিসেবে তাঁদের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে। এ দিন এজলাসে হাজির নরেন্দ্রপুর থানার আইসি-র অন্যত্র বদলির নির্দেশ আগেই এসেছে।
তবে এই মামলার তদন্তের কিছুটা অগ্রগতি না-হওয়া পর্যন্ত ওই পুলিশ ইনস্পেক্টরকে আপাতত নরেন্দ্রপুরেই রেখে দিতে পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ দিন সরকারি কৌঁসুলি সুপ্রিম চট্টোপাধ্যায় আদালতে বলেন,✓‘সোমবার কোর্টের নির্দেশের পর থেকে তিন-চার জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। দু’জনকে গ্রেপ্তার হরা হলেও অন্য দু’জনকে পওয়া যায়নি।’ তখন বিচারপতির প্রশ্ন, পঞ্চায়েত সদস্যকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি! এটা কী ভাবে সম্ভব?’
এ দিন স্কুলশিক্ষা দপ্তরের দুই সহ-অধিকর্তা তপনকুমার সিনহা ও অনিন্দ্যকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় বিরক্ত বিচারপতি তাঁদের ভর্ৎসনা করেন। তাঁদের দেওয়া রিপোর্ট দেখে বিচারপতি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে স্কুলের দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে আপনারা গিয়েছিলেন। গিয়ে কী করলেন? জেলা স্কুল পরিদর্শক তাঁর দু’টি রিপোর্টে স্পষ্ট ভাবে আর্থিক দুর্নীতির কথা জানিয়েছিলেন। সেই রিপোর্ট আপনারা ছুড়ে ফেলে দিলেন? শিক্ষা দপ্তরের কমিশনারকে যে সব অভিযোগ স্কুল শিক্ষকরা জানিয়েছিলেন, সেগুলো আপনারা খতিয়ে দেখলেন না?’
এমনকী, বিচারপতি মন্তব্য করেন, অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগে ওই সহ-অধিকর্তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি ধারায় মামলা হওয়া উচিত। যদিও ওই দু’জন নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে আদালত তাঁদের একবার সুযোগ দেয়। নতুন করে অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁরা মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট দেবেন। নতুন করে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিচারপতির মন্তব্য, ‘শুধু প্রধান শিক্ষক নন, এই সব ঘটনার পিছনে আরও অনেকে জড়িত। মনে হয়, এই স্কুলের অনেক সম্পত্তি আছে। আমি শুনেছি, এই স্কুলে দু’টি পুকুর আছে।’