Mangrove Forest : ভেড়ি ও চিংড়ি চাষের লোভে ধ্বংস হচ্ছে বাদাবনের রক্ষাকারী প্রাচীর – sundarbans mangrove forests are being destroyed due to fish farming


এই সময়, কুলতলি ও বাসন্তী: সুন্দরবন বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী প্রায় পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ কাটার ফলে ক্রমেই নিঃস্ব হচ্ছে নোনাজলের ভূমি। বিষয়টি নিয়ে কুলতলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

অভিযোগ, ভেড়ি ও চিংড়ি চাষের লোভে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ম্যানগ্রোভ কেটে সাফ করে দিচ্ছেন। কিছু ইটভাটার মালিকও ম্যানগ্রোভ কাটছেন বলে অভিযোগ। বাসন্তী গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়োখালি গ্রামেও অবাধে কাটা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। এমন চলতে থাকলে অচিরেই সুন্দরবনের সবুজ ঘোমটা হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বন দপ্তরের এডিএফও অনুরাগ চৌধুরী বলেন, ‘ঢোড়াবাগদা এলাকায় ম্যানগ্রোভ কাটার ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। এলাকার মানুষকে সতর্ক করতে আমরা দপ্তরের তরফে মাইকে প্রচার শুরু করেছি।’ প্রায় ফি বছর সুন্দরবনে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়। বিপর্যস্ত হয় জনজীবন। বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে ম্যানগ্রোভের প্রাচীরই সুন্দরবনকে আগলে রাখে।

অভিযোগ, কুলতলি, ক্যানিং, বাসন্তী এবং গোসাবার নদীর চরে নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ কেটে বেআইনি ভাবে তৈরি করে চলেছে মাছ ও চিংড়ি চাষের ভেড়ি। পরিবেশবিদরা মনে করেন, এতেই বিপদ বাড়ছে সুন্দরবনের। কুলতলি থানার গোপালগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঢোড়াবাগদা গ্রাম মাতলা নদীর ধারে অবস্থিত। সেখানে মাতলার চরে থাকা একের পর এক বাইন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঘটনাটি প্রথম নজরে এসেছে বন দপ্তরের কুলতলি বিটের বনকর্মীদের। হেঁটে নদীর চরে টহল দেওয়ার সময় তাঁরা ম্যানগ্রোভ কাটার বিষয়ে জানতে পারেন।

প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ম্যানগ্রোভ কাটার ঘটনা জানার পরেই কুলতলি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বনকর্মীরা। অভিযোগ, এক বছর আগেও এই এলাকায় ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছিল। বন দপ্তরের পিয়ালি বিটের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ওই এলাকার মানুষকে গাছ না কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রামবাসীদের সতর্ক করা হয়। এই নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশিকাও জারি হয়।

কুলতলির বাসিন্দা সব্যসাচী হালদার, বিশ্বনাথ হালদার, তপন সর্দার, মুরারি মণ্ডলরা বলেন, ‘ম্যানগ্রোভ আমাদের গ্রামের নদীবাঁধকে রক্ষা করে। ঘূর্ণিঝড়ে গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরেও মানুষের হুঁশ ফিরছে না।’ গোপালগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সুধর হালদার বলেন, ‘আমরা গ্রামের মানুষকে নিয়ে এর আগেও বৈঠক করেছি। তাঁদেরকে সচেতন করার চেষ্টাও চালিয়েছি। আমরা ম্যানগ্রোভ কাটার বদলে ম্যানগ্রোভ লাগানোর প্রতি আগ্রহ বাড়াব।’

মাতলা নদীর তীরেই অবস্থিত বাসন্তী গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়োখালি গ্রাম। নদীর চরেই রয়েছে বাইন, কেওড়া, কাঁকড়া প্রজাতির ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। অভিযোগ, সেখানেও বেআইনি ভাবে ইটভাটা থেকে ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল চিংড়ি চাষের ফিশারি। পরে আদালতের নির্দেশে বেআইনি সেই ইটভাটা বন্ধ হয়। এর পর বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল ম্যানগ্রোভ ধ্বংস। কিন্তু আবার নতুন করে নদীর চরে ম্যানগ্রোভ কাটার কাজ শুরু হয়েছে।

Mangrove Forest: বাদাবন রক্ষায় ম্যানগ্রোভ যোদ্ধা শিক্ষক
বাসন্তীর বিজেপি নেতা বিকাশ সর্দার বলেন, ‘গোটা সুন্দরবন জুড়ে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে কোথাও ফিশারি আবার কোথাও ইটভাটা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব মোটা টাকার বিনিময়ে সেই কাজে মদত দিচ্ছেন।’ বাসন্তী অঞ্চল তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শ্রীদাম মণ্ডল বলেন, ‘ওখানে আগে ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছিল। বর্তমানে তা বন্ধ আছে বলে জানতাম। যদি নতুন করে ম্যানগ্রোভ কাটা হয় তা হলে প্রশাসনকে বলব আইনি ব্যবস্থা নিতে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *