Calcutta High Court: প্রয়াত সরকারি স্বাস্থ্য-কর্মীর প্রাপ্য মেলেনি ৪৩ বছরেও! – calcutta high court fixed final hearing in bardhaman incident on friday


রাজেন্দ্রনাথ বাগ

নেলসন ম্যান্ডেলা তখনও বন্দি রবেন আইল্যান্ডের জেলে। রাকেশ শর্মাও মহাকাশে যাননি। কলকাতায় মেট্রো রেলও চালু হয়নি। কত যুগ আগের কথা। কুড়ি-কুড়ি বছরেরও বেশি। বদলেছে অনেক কিছুই। কিন্তু সময় থমকে আছে কালাচাঁদ আর অরুণার জীবনে। তেতাল্লিশ বছর ধরে কাটোয়ার এই ভাই-দিদি হাতড়ে চলেছেন ইনসাফ।

১৯৮১ সাল। তখন স্কুলে পড়েন অরুণা, কালাচাঁদরা। এখন ষাট পেরিয়েছেন। হতদরিদ্র পরিবারটির আস্তানা অজয়ের বাঁধে ত্রিপল ছাউনির এলোমেলো ঘরদুয়ারে। ’৮১-র ২৮ ডিসেম্বর মারা যান কালাচাঁদদের বাবা শচীপতি ঘটক। স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী হিসেবে অ্যাম্বুল্যান্স চালাতেন কাটোয়া হাসপাতালে। সেখান থেকে ডেপুটেশনে যান অবিভক্ত বর্ধমানের আসানসোলের হাসপাতালে। কর্মরত অবস্থাতেই পক্ষাঘাতের শিকার হন শচীপতি।

’৮১-র ডিসেম্বরে স্ত্রী, পুত্র-কন্যাকে রেখে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে কালাচাঁদের ১৮ বছর হলে কমপ্যাসনেট গ্রাউন্ডে তাঁর চাকরি চেয়ে ’৮৩-তে স্বাস্থ্য দপ্তরে আর্জি জানান বিধবা ভক্তিরানি। ছেলে চাকরি পেয়ে হাল ধরুক সংসারের–এটুকুই ছিল তাঁর প্রার্থনা। স্বাস্থ্য দপ্তরে কাজ, না হলে পুলিশে কনস্টেবল হতেও রাজি ছিলেন কালাচাঁদ।

কাটোয়ার মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলার সিএমওএইচ হয়ে ’৮৪ সালে বিষয়টি পৌঁছয় রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তার দরবারে। নথিপত্রও জমা হয়। তার পরেই অসহায় পরিবারটির আর্জি হারিয়ে যায় লাল ফিতের ফাঁসে। কালাচাঁদ-অরুণা নিরন্তর ছোটাছুটি করেও তল পাননি। দীর্ঘ ২৪ বছর পর ২০০৮-এ ফের বিষয়টি সামনে আসে, বর্ধমানের সিএমওএইচ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গড়েন। তার পর আবারও সেই ধামাচাপার কিস্যা। পরিবারটির অসহায় অবস্থা জেনে এক শিক্ষিকা মহিলা কমিশনে বিষয়টি জানান। কমিশনের হস্তক্ষেপের পর ২০১৫-য় পৌঁছে স্বাস্থ্য দপ্তর জানায়, ২০১১-তেই কালাচাঁদদের আবেদন খারিজ হয়েছে। কারণ, কমপ্যাসনেট গ্রাউন্ডে চাকরির আবেদন জানাতে ২৫ বছর বিলম্ব হয়েছে! ঘটনা হলো, আর্জি পেশ হয়েছিল সেই ’৮৩ সালেই।

এ বার শুরু হয় আদালতে লড়াই। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, লোকায়ুক্ত হয়ে হাইকোর্টে আসে মামলা। ইতিমধ্যে ভক্তিরানি মারা গিয়েছেন। বয়সের কারণেই ততদিনে কালাচাঁদের চাকরির সুযোগও হাত ছাড়া। কিন্তু শচীপতির অবসরকালীন প্রাপ্য, পেনশন/ফ্যামিলি পেনশন মেটানো হবে না কেন—প্রশ্ন তোলেন পরিবারের হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে মামলা লড়া আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী, শবনম সুলতানারা।

Calcutta High Court : সিনিয়র কাউন্সেল থেকে জাস্টিস পদে সুপারিশ থমকে পাঁচ বছর
স্বাস্থ্য দপ্তরের সওয়াল ছিল, শচীপতির চাকরি সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নেই। তথ্য-নথি খতিয়ে দেখে গত বছর ২১ অগস্ট বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য অবশ্য তাঁর রায়ে স্পষ্ট করে দেন, কর্মচারীর সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব দপ্তরেরই। শচীপতি যে কাটোয়া হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন, তাও প্রতিষ্ঠিত। তাঁর মৃত্যুও সংশয়াতীত। প্রয়াত সরকারি কর্মীর অবসরকালীন প্রাপ্য, পেনশন/ফ্যামিলি পেনশনের ন্যায়সঙ্গত দাবিদার তাঁর পরিজন। সেটা মিটিয়ে দিতেই হবে দু’মাসের মধ্যে।

তাতেও কাজ হয়নি। আদালত অবমাননার মামলা হয়। এ দফাতেও স্বাস্থ্য অধিকর্তার তরফে নথিপত্র না-থাকার ওজরই তোলা হয়। শচীপতির কর্মজীবন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়। আদালত সে সওয়াল খারিজ করে জানায়, এ সবের নিষ্পত্তি আগেই হয়েছে। পুরোনো অজুহাত তুলে প্রাপ্যে বঞ্চিত করা যাবে না কালাচাঁদদের। পরিবারের কাছে থাকা কাগজপত্র ফের ৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য-অধিকর্তার কাছে পেশের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। সে দিন কালাচাঁদদের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে আইনজীবী শবনম সুলতানার অবশ্য খুব খারাপই অভিজ্ঞতা হয়। কাগজপত্র নেওয়া নিয়েও চলে টালবাহানা। এই অবস্থায় কাল, শুক্রবার চূড়ান্ত শুনানি নির্দিষ্ট করেছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

রাকেশ শর্মার যুগ পেরিয়ে ভারতের সফল চন্দ্র-অভিযান ঘটে যাওয়ার পর কালাচাঁদরাও এ বার তাঁদের লড়াইয়ে সাফল্যের মুখ দেখেন কি না–‘অমৃতকালে’ এখন তারই অপেক্ষা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *