Asmatara Khatun: মায়ের গয়না বন্দক রেখে পড়াশোনা, অদম্য জেদেই আজ রেল চালাচ্ছে আসমা


বিধান সরকার: অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে না দিয়ে শিক্ষিত করে তুললে তারাও আসমাতারা হতে পারে। হুগলির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রেলের মহিলা লোকো পাইলট হয়ে ওঠার গল্প নারী দিবসে। যে মেয়ের পড়াশোনায় গয়না বন্দক দিয়েছিলেন সেই মেয়ে রেলের লোকো পাইলট হয়ে সংসারের হাল ধরেছে। অভাবকে দূরে সরিয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে হুগলির দাদপুরের আসমাতারা খাতুন। আসমাতারা খাতুন, রেলের খড়গপুর ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকোপাইলট পদে চাকরি করেন। আর তার এই কাজে গর্বিত গোটা গ্রাম।

আরও পড়ুন, Bengal Weather Today: দক্ষিণবঙ্গে পরিষ্কার আকাশ, ক্রমশ বাড়বে তাপমাত্রা

মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করাই লক্ষ্য ছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু অভাবের সংসারে তা ছিল সমস্যার। ছোট থেকেই মেধাবী ছিল আসমাতারা। রসুলপুর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনা করে মহেশ্বরপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ, ধনিয়াখালি মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে দুর্গাপুরে বেঙ্গল কলেজে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি.টেক পাশ করেন। মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন তার মা নুরজাহান বেগম ও বাবা জাকির হোসেন।

বাবার সামান্য দুই বিঘা জমি চাষবাস করে যা উপার্জন হতো তা দিয়েই তিন সন্তানকে নিয়ে চলত তাদের সংসার। আসমাতারা পরিবারের বড় মেয়ে। তার এক বোন ও এক ভাই আছে। তারাও মেধাবী। মেয়ে বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে বাড়তে থাকে পড়াশোনার খরচ। কিন্তু অভাবের সংসারে সেভাবে ভালো করে কোচিং দিতে পারেননি বাবা-মা। তাই ইউটিউব দেখে অনলাইন পড়াশোনা চলতে থাকে। অনেকবার ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষা দিয়ে বিফল হতে হয়েছে তাকে। তবুও হাল ছাড়েননি। লক্ষ্য স্থির রেখে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করে চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন তাই মায়ের ইচ্ছা ছিল টেকনিক্যাল লাইনে পড়াশোনা করার। তার জন্য নিজের সোনার গহনা বন্দক দিতে হয়েছিল। শুধু তাই নয় গরুর দুধ বিক্রি করেও মেয়ের খরচ যুগিয়েছেন। তাই মেয়ের সাফল্যে গর্বিত তার মা-বাবা।

আসমাতারা বলেন, লক্ষ্য ছিল সরকারি চাকরি করার। সেই মতো পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির আবেদন করেও চাকরি পাইনি। আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। তবুও ভেঙে পড়িনি, ফের প্রস্তুতি শুরু করি। এরপর কলকাতায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে ব্যাংকের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিই। পরে রেলে চাকরির চেষ্টা করি। বর্তমানে রেলওয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকোপাইলটের কাজ করছি। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও অনেক গুঞ্জন শুনতে হয়েছিল। তবুও নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলাম। আমার সাফল্যের পিছনে আমার মায়ের অবদান অনেক। ক্লাস নাইন পর্যন্ত মায়ের কাছেই পড়াশোনা শিখেছি। নারী দিবসের সকল মেয়েদের আমার একটাই বার্তা কে কি বলছে সেদিকে কর্ণপাত না করে নিজের লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে। 

আসমাতারার মা বলেন, মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। সামান্য দুই বিঘা জমি ছিল তা থেকে কিভাবে মেয়ের পড়াশোনা চালাবো কিভাবে সংসার চালাবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বিয়ের সময় বাবার দেওয়া জিনিস বন্দক রেখে মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়েছি। পরে আর ফিরিয়ে আনতে পারিনি। তবে তাতে আমার কোনও দুঃখ নেই। আজ মেয়ে সংসারের হাল ধরেছে। ছোট ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে। ছেলে আজ কম্পিউটার সায়েন্সের ইঞ্জিনিয়ার। ছোট মেয়ে বিএসসি নার্সিং করছে। আজ সন্তানদের পরিচয়ে আমার পরিচিতি। আমি লোকো পাইলট অ্যাসিস্ট্যান্ট এর মা। আমাকে আজ সবাই চেনে। মেয়ের সাফল্যে আজ আমিও গর্বিত। আমিও চাই, অল্প বয়সে যেন মেয়েদের বিয়ে না দিয়ে দেয়ে তাদের স্বপ্নকে সার্থক করতে দিতে হবে।

বাবা জাকির হোসেন বলেন, মেয়েকে মানুষ করতে অনেক ঝড়ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে। ছোট থেকে মেয়ে ছিল মেধাবী। মুসলিম পরিবারের মেয়ে হয়ে যে কাজ করছে সেটা আমাদের কাছে গর্বের। প্রতিটা বাবা মায়ের উদ্দেশ্যেই বলব জীবনে ঝড়ঝাপটা আসবে সেটাকে সহ্য করেই এগিয়ে যেতে হবে। মেয়েকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন, Bankura News: দলীয় কর্মীদের দিয়ে গাড়ি ভাংচুর! তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপানোর অভিযোগ কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *