কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে
ভারতের সব থেকে প্রাচীন দলেই নাম লেখান প্রথমে। রাহুল গান্ধীর ‘আম আদমি কা সিপাই’ কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজনীতির নেবেই। তবে হাত শিবিরে বেশিদিন মন টেকেনি। বাংলার স্ট্রিট ফাইটার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেস। উচ্চ শিক্ষিতা, সুবক্তা মহুয়াকে চিনে নিতে ভুল করেননি তৃণমূল নেত্রী। প্রথমে বিধানসভায় দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেন। নদিয়া জেলার করিমপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় জেতেনও তিনি। প্রথম রাউন্ডেই জয়লাভ তাঁকে ভারতীয় সংসদে পাঠাতে দেরি করেনি। কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকেই পরের লোকসভা নির্বাচনে সংসদে যান তিনি।
কাজের ফাঁকে মহুয়া
লোকসভায় ঝড়ের গতিতে উত্থান
লোকসভায় তাঁর বক্তৃতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর সজ্জায় অ্যাথেনিক টাচ ক্যামেরা ম্যানকে পেছন পেছন ছুটতে বাধ্য করে। ঝাঁঝালো বক্তৃতায় কেন্দ্রের শাসক দলকে লাগাতার আক্রমণের স্বভাব তাঁকে অল্পদিনের মধ্যেই ভারতীয় গণতন্ত্রের মন্দিরের নিম্নকক্ষে লাইম লাইট কেড়ে নিতে সাহায্য করে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। লোকসভায় তাঁর পারফরম্যান্স কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকেও তাঁকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য করে।
দেওয়াল লিখন শুরু
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে মহুয়া
যদিও, সাংসদ জীবনে বিতর্কও কিছু কম নেই তাঁর। কানাডার এক তথ্যচিত্রের পোস্টার মা কালীকে এমন ভাবে দেখানো হয়েছে তা তোলপাড় করে দেয় গোটা দেশ। সেই বিষয় নিয়ে কিছু অসংলগ্ন মন্তব্য করে বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। মা কালীকে নিয়ে এরকম মন্তব্যের যেতে অনেকেরই ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে ফেলেন কার্যত অজান্তেই। তবে বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। একদা মিডিয়া ফোকাসড মহুয়া সংবাদ মাধ্যমকে নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন। তাঁর ‘ দু পয়সার সাংবাদিক’ মন্তব্য রাজনীতির জগতের পাশাপাশি সংবাদ জগতেও সমালোচনা হজম করতে বাধ্য করে।
প্রচারের স্ট্র্যাটেজি কী?
তিনটে বিধান সভার প্রতেকটা পঞ্চায়েত নিজে গিয়ে বুথ সভাপতি ও বুথ কর্মীদের সঙ্গে মিটিং শেষ করে ফেলেছেন। লোক সভার প্রস্তুতি হিসাবে সমস্ত বিধায়ক, সমস্ত ব্লক সভাপতি, সমস্ত প্রধান, সমস্ত জেলা পরিষদ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাধিপতি এবং অঞ্চল সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে করেছেন। তৃণমূল স্তরে গিয়ে প্রচারে অভিনবত্ব আনতে চাইছেন মহুয়া। নিজের পাঁচ বছরের কাজের প্রচারের পাশাপাশি সংগঠিনক স্তরে কোথায় ফাঁকফোকর আছে, যাচাই করে নিচ্ছেন বিদায়ী সাংসদ।
তবে লোকসভার ইতিহাসে সবথেকে খারাপ সময়টা দেখে নিলেন কয়েক মাস আগেই। সংসদে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। বিজেপি উঠে পড়ে লাগে তাঁর সংসদ পদ খারিজ করার বিষয়ে। সংসদে অন্যান্য বিরোধী দলকে পাশে পেলেও এই বিতর্ক থেকে বের হতে পারেননি মহুয়া। এথিক্স কমিটির সুপারিশের রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁকে লোকসভা থেকে বহিস্কার করা হয়। একটা সময়, দলও তাঁকে নিয়ে কিছুটা ধীরে চলো নীতি নিলেও তাঁর মতো ক্যারিশম্যাটিক সাংসদের পাশে দাঁড়ান দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের এবার তাঁকে লোকসভার টিকিট দিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করে দিয়েছেন, বিতর্ক পিছু নিলেও দল তাঁর পাশেই আছে।
