লোকসভা নির্বাচনের সূচি ঘোষণার আগেই থেকেই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভিন রাজ্যের বিজেপি নেতারা পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে আসতে শুরু করেছেন। মোদী-শাহদের সভায় প্রত্যাশিত ভিড় হচ্ছে না বলেই এখন বিজ্ঞাপন দিয়ে কুৎসা ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলনেত্রীর। ভোটের ময়দানে যুযুধান দু’পক্ষ একে অন্যকে আক্রমণ করেন—এটাই রেওয়াজ। সেই ভাবেই তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন নির্বাচনী সভায়। কিন্তু গত কয়েক দিনে বিজেপির একটি বিশেষ বিজ্ঞাপনী প্রচার দেখে প্রবল ক্ষুব্ধ হয়েছেন মমতা। এই বিজ্ঞাপনে তৃণমূল জমানায় রাজ্যে দুর্গাপুজোর বিসর্জন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরস্বতী পুজোয় বাধা দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী পুজোর মন্ত্র ভুল উচ্চারণ করেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
এই বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন পয়েন্ট ধরে ধরে এ দিন মোদী-শাহকে নিশানা করেছেন মমতা। মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘মোদীবাবু যে চ্যাংড়াদের দিয়ে এই বিজ্ঞাপন করেছেন, তাঁরা জানেন তো চণ্ডীপাঠ অনেক ভাবে হয়? আমি বেলুড়ের শান্তনু মহারাজের কাছে (চণ্ডীপাঠ) শিখেছি। আমি তো চণ্ডীপাঠ করতে পারব। আপনি কি মা লক্ষ্মীর পুজোর মন্ত্র বলতে পারবে? আপনি আমাদের ধর্ম শেখাচ্ছেন?’
মমতার সাফ কথা, ‘একটা হেয় লোক, দুষ্টু লোক, বাজে লোক, খতরনাক লোক, সন্ত্রাসের কারিগর, দাঙ্গার কারিগর, খুনিদের কারিগর—তাঁর কাছে আমাকে ধর্ম শিখতে হবে? যাঁর জীবনে ধর্ম মানে দাঙ্গা, তাঁর কাছ থেকে আমি দাঙ্গা শিখতে যাব না। আমি এই সব বলতাম না, আপনারা টাকা খরচ করে এই সব কুকথা না বললে।’ গুজরাট দাঙ্গার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী গুজরাটের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে রাজধর্ম পালন করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
মমতা এ দিন সে প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘হঠাৎ দু’টো লোক এসে দাঙ্গা করে কত লোককে যে খুন করেছিল, তার ঠিক নেই। বাজেপয়ীর কথা মনে আছে? বলেছিলেন, রাজধর্ম পালন করো। কী মোদীবাবু মনে পড়ে? অটলজিও বিজেপি করতেন। আমাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, কিন্তু কোনও দিন এই ধরনের রাজনীতি করেননি।’
বঙ্গ বিজেপির নেতাদের পাশাপাশি মোদী-শাহও রাজ্যে প্রচারে এসে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে পিসি-ভাইপো বলে খোঁচা দেন। এর পাল্টা মমতা বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর দলের যদি হিম্মৎ থাকে, তা হলে পিসি-ভাইপো বলবে না। আমার আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম দিয়ে বিজ্ঞাপন করো। আমি দেখতে চাই, কত বড় বুকের পাটা! কোন পিসি? কোন ভাইপো? খায়, না মাথায় দেয়?’
মোদী-শাহ তাঁদের ভাষণে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থ চুরির অভিযোগও লাগাতার তুলে আসছেন। বিজেপি চোর-চোর স্লোগানও দিচ্ছে প্রতিটি সভায়। এনিয়ে মমতার স্পষ্ট কথা, ‘এটা বাংলার নির্বাচন নয় যে, আমাকে চোর বলল, আমি চোর হয়ে গেলাম। এটা নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচন। মোদীকে জবাব দিতে হবে তিনি চোর, নাকি ডাকাত, নাকি তিনি গোরু চোর, নাকি মাফিয়া, নাকি মানুষের পকেট কেটে চুরি করেছেন! আমার উত্তর দেওয়ার পালা নয়, আপনার উত্তর দেওয়ার পালা।’
মমতার এই বেনজির আক্রমণের প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘হতাশা ওঁকে গ্রাস করেছে। সেজন্যই প্রতিটি সভায় তিনি এমন সব শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন, এমন প্রসঙ্গ নিয়ে আসছেন, যা অনভিপ্রেত। তিনি নিজের রাজনৈতিক উচ্চতাকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। ওঁর পরাজয় অনিবার্য, বিসর্জনের প্রস্তুতি নিন।’
তৃণমূল নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, এই বিজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রকে নোটিস দেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ দায়ের করা হবে। মমতা নিজেও আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘যে সংবাদমাধ্যমগুলো টাকার জন্য এগুলো ছাপাচ্ছে, আমি তাদের একটা কথা বলি, একবারও কী দেখেছেন ওখানে প্রচারকের নাম নেই? নাম দিয়েছে শুধু বিজেপি পার্টি অফিস থেকে প্রকাশিত। এটা বেআইনি। আমরা ঠিক করেছি, ইলেকশন কমিশনকে বলব। বিচার না করলে আমরা লিগ্যাল অ্যাকশন নিতে বাধ্য হব।’ বিজেপির এই বিজ্ঞপনী প্রচারে টাকার জোগান নিয়েও প্রশ্নও তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী।