Crocodile In Gange,কলকাতায় কুমির? লাটে গঙ্গাস্নান, আতঙ্ক বিভিন্ন ঘাটে – crocodile fear in kolkata ganges river bathing stop


এই সময়: কলকাতার পাশের গঙ্গাও কি ক্রোকোডাইল রিভার হয়ে গেল! আশ্চর্যের কথা তো বটেই। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক চিরে বয়ে চলা ক্রোকোডাইল রিভারে দেখা মেলে বিশ্বের অন্যতম বিশালাকার কুমির, যা পরিচিত নাইল ক্রোকোডাইল নামে। সাইজ়ে তারা ১৬ ফুটের কাছাকাছি। সামলে গেলে সাবাড় হয়ে যাবেন নিশ্চিত।কলকাতা-হাওড়া তীরবর্তী গঙ্গায় গত দু’দিন যে প্রাণীর দেখা মিলেছে, সেটা কুমির না ঘড়িয়াল সন্দেহ আছে। সাইজ়ও ক্রুগারের কুমিরের কাছাকাছি নয়। কিন্তু আতঙ্কের পারদ যে ভাবে চড়ছে, তাতে ক্রুগার ও কলকাতা এক ব্র্যাকেটে ঢুকেই পড়ছে। গঙ্গার বুকে কুমিরের আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে প্রশাসনেরও! এক আধটা নয়, তিন-তিনটে আস্ত কুমির নাকি মুখ তুলছে জলের মধ্যে থেকে!

নানা সময়ে তাদের নানা জায়গায় দেখতেও পাওয়া যাচ্ছে। গত দু’দিন ধরে কলকাতা এবং হাওড়ার আশপাশে কুমিরের খবর চাউর হতেই শিকেয় উঠেছে গঙ্গাস্নান। ঘাটে নামতেও ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যাঁরা নিয়মিত সেখানে সাঁতার কাটতে যান, তাঁরাও আর সেমুখো হচ্ছেন না। স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও দুরু দুরু বুকে গঙ্গায় মাছ ধরতে যাচ্ছেন। কুমির দর্শনের খবর শোনার পরেই ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে দুটি অনুসন্ধান টিম তৈরি করেছেন বন দপ্তরের কর্তারা।

শনিবার বিকেল থেকে তাঁরা জোরকদমে তদন্তে নেমেছেন। কলকাতা রিভার ট্রাফিক পুলিশও আলাদা করে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে। যদিও বন দপ্তরের ধারণা, কুমিরের মতো দেখতে হলেও প্রাণীটি ঘড়িয়ালও হতে পারে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ আহিরীটোলা ফুলপট্টি ঘাটের কাছে কুমিরের মতো একটি প্রাণী গঙ্গায় দেখতে পাওয়া যায়। সেটির দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ-ছ’ফুট। সঙ্গে দু’টো বাচ্চাও ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য।

এর পর থেকেই আহিরীটোলা ফুলপট্টি ঘাটে নামার সাহস পাচ্ছেন না কেউ। শোভাবাজারের দর্জিপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় সাঁতার প্রশিক্ষক ভোলা পালের কথায়, ‘আমি সকালের দিকে নিয়মিত গঙ্গায় সাঁতার কাটতে যাই। ঘাটে গিয়ে জানতে পারলাম, গঙ্গায় কুমির ভাসছে। সেটা শোনার পরে আর জলে নামার সাহস পাইনি। আহিরীটোলা ঘাটে আমার মতো প্রচুর মানুষ স্নান করতে আসেন। ভয়ে গত দু’দিন ধরে তাঁরা আর গঙ্গায় নামছেন না।’

হাওড়ার সালকিয়ার গোলাবাড়ির বাসিন্দা অশোক সাউ বলেন, ‘আমরা রোজ দুপুরে গঙ্গায় স্নান করতে যাই। গতকালও গিয়েছিলাম। ঘাটে নামার আগে হঠাৎ কুমিরটা দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে যাই। ভয়ে স্নান না করেই চলে আসি।’ রাজ্য বন দপ্তরের ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মনোজ যশ জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে মূলত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী এবং খাঁড়িতে কুমির দেখতে পাওয়া যায়। কলকাতার গঙ্গায় আজ পর্যন্ত কোনও দিন কুমির দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন থেকে নদীপথে কলকাতায় কুমির চলে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অতীতে ফারাক্কা এবং বর্ধমানের কালনার কাছে গঙ্গায় কুমির দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। তবে এটা সত্যি কুমির কি না, তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। সে জন্য আমরা আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে খোঁজখবর নিচ্ছি। সত্যিকারের কুমির হলে সেটা চিন্তার বিষয়। কারণ, আমাদের কাছে কুমির ধরার মতো কোনও সরঞ্জাম নেই। সেক্ষেত্রে সুন্দরবন ডিভিশন থেকে এক্সপার্টদের ডেকে আনতে হবে।’

বন দপ্তরের সচিব বিবেক কুমারের বক্তব্য, ‘কলকাতার গঙ্গায় কুমির রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনও কনফার্ম খবর নেই। তবে গত দু’তিন দিন ধরে একটা ঘড়িয়ালকে হুগলির ভদ্রেশ্বর এবং কলকাতার আশপাশে গঙ্গায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। পুলিশের থেকে খবর পেয়ে ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের রেঞ্জ অফিসাররা ইনস্পেকশন করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। ঘড়িয়াল খুব একটা বিপজ্জনক নয়। এরা মূলত নদীর মাছ খায়। একমাত্র ভয় পেলে তবেই তারা মানুষকে আক্রমণ করে।’

কলকাতা পুলিশের রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের ওসি ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর কথায়, ‘দিন চারেক আগে আমরা মৎস্যজীবীদের কাছে জানতে পারি, খিদিরপুরের কাছে গঙ্গায় কুমির দেখা গিয়েছে। সেটা জানার পরেই আমরা বন দপ্তরকে খবর দিই। তারা আমাদের জানিয়েছে, ওটা সম্ভবত ঘড়িয়াল। এরা দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো। মুখটা ছুঁচলো হয়। তবে এটাই সেটা কি না, আমরা তা বলতে পারব না। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *