ফয়জ়ানের দেহের মোট দু’বার ময়না তদন্ত হয়েছে। প্রথমবারের রিপোর্টে সুইসাইডের ইঙ্গিত ছিল। তার প্রমাণ হিসেবে সিটের হাতে বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাটও আসে। কিন্তু সেই যুক্তিতে একমত না হওয়ায় তাঁর পরিবার খুনের অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা করে। আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত হয়। এরপর ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্তের রিপোর্টে ওই ছাত্রের ঘাড়ের বাঁ দিকের ক্ষত গুলির কারণেই হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
চিকিৎসকের প্রশ্ন, ‘বাঁ দিকে গুলির দাগ থাকলেও, পিএম রিপোর্টে তাঁর কোনও রিফ্লেকশন ছিল না। ডান দিকের ঘাড়ের ছবি রাজ্যকে দিতে হবেই। ওরা বলছে, ভিডিয়োটা নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকের ভিডিয়ো থাকবে, আর অন্যদিকের থাকবে না, তা তো হতে পারে না। এই তদন্তে দু’টোই গুরুত্বপূর্ণ।’
মৃত ছাত্রের পরিবারের তরফে প্রথম থেকেই দাবি করা হচ্ছে, পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে ফয়জ়ানকে। এ বিষয়ে সিট-এর রিপোর্টে কলকাতা হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হতে পারেনি। গত মাসে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত নির্দেশ দেন, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্ত যা যা তথ্য এবং নথি চাইছেন, তা এক সপ্তাহের মধ্যেই দিয়ে দেওয়া হোক। প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে সিটের অফিসারদের দেখা করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। ১৩ জুন মামলার শুনানি থাকলেও, তা হয়নি। পরবর্তী ক্ষেত্রে মামলাটি সরে যায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে।
রাজ্যের তরফে আদালতকে জানানো হয়, তদন্তে পলিগ্রাফ টেস্টের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই সিএফএসএল-র ডিরেক্টরকে মাথায় রেখে একটা মেডিক্যাল টিম গড়ে দেওয়া হোক। ফয়জ়ানের পরিবারের আইনজীবী রণজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা চাই এই মামলার দ্রুত নিস্পত্তি হোক। ফরেন্সিক এক্সপার্ট তাঁর রিপোর্ট আইনজীবী মারফত হাইকোর্টকে জানিয়েছেন। তাতে আত্মহত্যার তত্ত্ব নেই। গুলি করে খুনের উল্লেখ থাকায় বিচারপতি উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। চলতি সপ্তাহেই আদালতে এই মামলার যাতে দ্রুত শুনানি হয়, তার আবেদন করব।’
২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর খড়্গপুর আইআইটি-র হস্টেলে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল ফয়জ়ান আহমেদ নামে এক পড়ুয়ার। তাঁর মায়ের বক্তব্য, ‘আমার ছেলে সুইসাইড করতে পারে না। আরও পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখত ও।’
অসমের তিনসুকিয়ার বাড়িতে মৃত্যুর মাস পাঁচেক আগে গিয়েছিলেন ফয়জ়ান। পরিবারের প্রশ্ন, ‘যদি গুলি করেই খুন করা হয়ে থাকে, তা হলে কোথা থেকে কারা আগ্নেয়াস্ত্র এনেছিল ওই হস্টেলে?’ অভিভাবকদের দাবি, ‘ফয়জ়ান র্যাগিং-এর শিকার। মাঝেমধ্যে ঘরের আলো বন্ধ করে দেওয়া হতো। ফেব্রুয়ারি মাসে র্যাগিং করা হলে তা নিয়ে সে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির কাছে অভিযোগও করে। মনে হয়, হস্টেল রিপ্রেজেন্টেটিভ ইলেকশনে ভোট দিতে অস্বীকার করায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে ওকে।