Lake Gardens Shooting,গেস্ট হাউসে গুলি! রক্তাক্ত প্রেমিকা, আত্মঘাতী যুবক – youth shooting his girlfriend at guest house in south kolkata lake gardens


এই সময়: প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। শহরের গেস্ট হাউসে তার বদলা নিতে ‘বান্ধবী’-কে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক যুবক। বুধবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার লেক গার্ডেন্সের নীরবতা ভাঙল পরপর দুটি গুলির শব্দে। অভিযুক্ত যুবক বছর সাতাশের রাকেশ কুমার শাহ-র গুলি লাগে তাঁর বান্ধবী বছর একুশের নিক্কু কুমারী দুবের ডানদিকের কোমরের উপরে। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর রাকেশ নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।গড়িয়াহাটের খুব কাছে দিনের আলোয় এভাবে গুলি চালানোর ঘটনায় অবাক হয়েছেন অনেকেই। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তা নিয়ে। কীভাবে এত সহজে এক যুবকের কাছে নাইনএমএমের মতো আধুনিক পিস্তল চলে আসছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে আমজনতা।

ঘটনার সূত্রপাত লেক গার্ডেন্সের নিউ মেট্রো গেস্ট হাউসে। এদিন দুপুর দুটো নাগাদ নিক্কুকে নিয়ে রাকেশ ওই গেস্ট হাউসে ওঠেন। সেখানকার এক কর্মীর বয়ান অনুযায়ী, এর আগেও বেশ কয়েকবার দুজনে ওই গেস্ট হাউসে এসে উঠেছিলেন। একবার রাত্রি বাসও করেছিলেন। প্রতিবারই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তাঁরা গেস্ট হাউসের লগ বুকে নাম নথিভুক্ত করাতেন। বুধবারও তার অন্যথা হয়নি।

গেস্ট হাউসের চারতলার ৩০১ নম্বর ঘর তাঁদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। অভিযোগ, ওই ঘরে ঢোকার পর থেকেই দুজনের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। পুলিশের বক্তব্য, গত ৭ বছর ধরে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে ঠিকও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, সম্প্রতি নিক্কু বিয়ে করতে বেঁকে বসেন। সেই কারণ অবশ্য পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়।

পুলিশ জানিয়েছে, এদিন বিকেল ৪.৫০ নাগাদ হোটেলের কেয়ারটেকার প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পান। এর পরে নিক্কু নিজেই রক্তাক্ত অবস্থায় একতলায় হোটেলের রিসেপশনে নেমে আসেন। জানান, রাকেশের সঙ্গে তাঁর বচসা তুঙ্গে ওঠার পরে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। সে সময়ে রাকেশ তাঁকে পিছন থেকে গুলি করেন। সেই গুলি লাগে তাঁর ডানদিকের কোমরের উপরে। সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ইইডিএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।‌ রাকেশ তখনও ছিলেন চারতলার ঘরেই।

লেক থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানায় গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষ। এর মিনিট কয়েক পরেই দ্বিতীয় গুলির শব্দ ভেসে আসে চারতলা থেকে। হকচকিয়ে যান গেস্ট হাউসের কর্মীরা। তাঁরা অপেক্ষা করতে থাকেন পুলিশের জন্য। লেক থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কর্মীদের নিয়ে চারতলায় ওঠে। ৩০১ নম্বর ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায়, রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। সেখানে পড়ে রয়েছেন রাকেশ।

পুলিশ জানিয়েছে, মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। ওই ঘর থেকে একটি নাইনএমএম পিস্তল ও দুটি গুলির খোল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকরা।

পুলিশ রাকেশ-নিক্কুর ফোন দুটি বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই ফোন দুটি ঘেঁটেই প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, যুগলের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে তরুণী এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন। এদিন সম্ভবত সে বিষয়েই দুজনের মধ্যে বচসা বেধেছিল।

প্রশ্ন উঠেছে, কোথা থেকে রাকেশ নাইনএমএম পিস্তলটি পেলেন? নিক্কু কি ঘুণাক্ষরেও জানতে পেরেছিলেন যে তাঁর বন্ধুর কাছে বন্দুক আছে? রাকেশ আদতে কী করেন, তাঁর পেশা কী সেই সম্পর্কেও পুলিশ অন্ধকারে। পুলিশ জানিয়েছে, দুজনের বাড়িই বজবজে। তদন্তকারীদের দাবি, রাকেশের কোনও ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কোথা থেকে তিনি ওই পিস্তল জোগাড় করলেন?

নিমতা শ্যুটআউটে গ্রেফতার অভিযুক্ত, পুরনো শত্রুতার জেরেই গুলি? কারণ খুঁজছে পুলিশ

এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে তরুণীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বয়ান নথিভুক্ত করবে পুলিশ। ইতিমধ্যেই দুই বাড়ির লোকেদের খবর পাঠানো হয়েছে। তাঁরা রাতেই কলকাতায় পৌঁছেছেন। তাঁদের সঙ্গেও কথা শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

রাকেশের দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। আজ, বৃহস্পতিবার নিক্কুর অপারেশন হওয়ার কথা। স্থানীয় সূত্রের খবর, রাকেশ সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ নিয়ে ওই সংক্রান্ত কাজকর্ম করতেন। নিক্কুর বাবা জুট মিলের কর্মী। রাকেশের পরিবার এদিন দুপুরে একটি নিমন্ত্রণ বাড়িতে গিয়েছিল। তাঁর ভাই দিনেশের দাবি, গোটা ঘটনার জন্য নিক্কুই দায়ী।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *