অডিটের সময়ে সেই ভুলত্রুটিগুলো ধরা পড়ছে। সে জন্যই তাঁদের কাছে ফাইল পাঠানোর আগে কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম কমিশনারের মতো পুরসভার সর্বোচ্চ স্তরের অফিসাররা সে সব ভাল ভাবে দেখে নেবেন। যাতে জনপ্রতিনিধিদের ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যায় না-পড়তে হয়।
মেয়র পারিষদদের কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, নতুন এই নির্দেশিকা তাঁদের উপর নজরদারি করার উদ্দেশ্যেই। পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, যে সব প্রকল্পের খরচ ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে, তার অনুমোদন দেন মেয়র পারিষদরা। তার বেশি খরচ হলে মেয়রের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়।
কিন্তু নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যাবতীয় ফাইল পুর কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার কিংবা মিউনিসিপ্যাল সেক্রেটারির হাত ঘুরে আসবে। তাঁরা যে কোনও যুক্তি খাড়া করে ফাইল আটকে দিতে পারেন, এমনই যুক্তি মেয়র পারিষদদের কারও কারও। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে কাজ শেষ করতে অনেক বেশি সময় লাগবে, ব্যাহত হবে জরুরি পরিষেবা।
এক মেয়র পারিষদের কথায়, ‘পুরসভার কাজই হলো, নাগরিক পরিষেবা দেওয়া। সে জন্য অনেক সময়েই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। ছোটখাটো কাজ হলে এতদিন আমরাই অনুমোদন দিতাম। দরকার পড়লে মেয়রকে একবার ছুঁইয়ে নিতাম। এখন আর আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ফাইল পাশ করাতে বাড়তি সময় লাগছে।’
ওই মেয়র পারিষদের বক্তব্য, ‘আইএএস অফিসাররা সাধারণত বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে বেরোতে চান না। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থে অনেক সময়ে আমাদের নিয়ম ভাঙতে হয়। তা না-হলে ভোগান্তি হয় নাগরিকদের।’ পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, যে কোনও কাজ করানোর জন্য সাধারণত পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা প্ল্যান-এস্টিমেট তৈরি করে প্রথমে এগজি়কিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে ফাইল পাঠান। সেই ফাইল ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিভাগীয় ডিজি-র কাছে যায়।
খরচের পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকার নীচে হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিজি-রা এতদিন মেয়র পারিষদকে দিয়ে ফাইল অনুমোদন করিয়ে নিতেন। তার পর রুটিন মেনে সেই ফাইল কোনও অতিরিক্তি কমিশনার অথবা যুগ্ম কমিশনারের কাছে যেত। মেয়র পারিষদ ফাইলে একবার সই করে দিলে তাঁরা সচরাচর আপত্তি করে জটিলতার মধ্যে যেতেন না। ফলে, ফাইলে অনিয়ম হলেও সেটা শোধরানোর জায়গা ছিল না।
তবে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিং বলেন, ‘আমাদের ভালোই হলো। অফিসাররা যদি সবটা দেখে নেন, তা হলে আমাদের ঘাড়ে আর দোষ চাপবে না।’