Buddhadeb Bhattacharya,দলকে কংগ্রেসের হাত ধরতে বলেছিলেন স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে – buddhadeb bhattacharjee says party to hold hands with the congress


এই সময়: ২০১৬। সিপিএমের অন্দরে গৌতম দেব সবে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতা নিয়ে খুব নিচুস্বরে সওয়াল শুরু করেছেন। কিন্তু তখনও সিপিএমের র‍্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইলের কাছে কংগ্রেসের হাত ধরা ছিল অকল্পনীয় হাইপোথেসিস। কংগ্রেস মানেই তো সিপিএমের কাছে পুঁজিপতি জোতদার জমিদারদের দল! কংগ্রেস মানেই গত শতকের সত্তরের দশকের ‘আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস’। কংগ্রেস হলো উদার অর্থনীতির সমর্থক।ততদিনে ইউএসএ-র সঙ্গে পরমাণু চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে বামেরা। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও প্রত্যাঘাতে ২০১১ সালে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ৩৪ বছরের বাম-জমানার পতন ঘটায়। এই পটভূমিতে এক শীতের বিকেলে সিঙ্গুরে টাটা কারখানা থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজের দলকে প্রায় চমকে দিয়ে বলেছিলেন, ‘জোট বাঁধুন। এই অশুভ শক্তিকে (তৃণমূল) আমরা পরাজিত করতে পারব। কংগ্রেসকেও বলছি, আপনারা সিদ্ধান্ত নিন। কংগ্রেসকেই ঠিক করতে হবে এই লড়াইতে তারা কোন দিকে।’

বুদ্ধদেব তখন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য। যেখানে কট্টরপন্থী প্রকাশ কারাট শিবির সে সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বুদ্ধদেব দলীয় ছুৎমার্গ, কমিউনিস্ট পার্টির রেজিমেন্টেশন ভেঙে সিপিএমের প্রথম কোনও শীর্ষ নেতা হিসেবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার বার্তা দিয়েছিলেন। শুধু বার্তা দেওয়াই নয়, সিপিএমের কট্টরপন্থীদের বাধায় যখন সীতারাম ইয়েচুরি হুগলিতে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে একমঞ্চে নির্বাচনী প্রচার করতে পারেননি, তখন পার্ক সার্কাসে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে যৌথ সভা করে বাম ও কংগ্রেস জোটকে মজবুত করার বার্তা দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব।

বলা বাহুল্য, কংগ্রেসের হাত ধরার প্রশ্নে তাঁর পথপ্রদর্শক ছিলেন জ্যোতি বসু এবং দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক হরকিষেন সিং সুরজিৎ। যাঁরা সেই গত শতকের নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে জাতীয় স্তরে বিজেপির মোকাবিলায় দলকে কংগ্রেসের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে আসছিলেন। তাঁদের পরামর্শেই ২০০৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সিপিএম কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের ডাক দিয়েছিল।

বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে তারপর অনেক নাটকীয় টানাপড়েন হয়েছে। জোট ভেঙেছে, আবার তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে সিপিএম প্রায় ভাঙনের মুখেও পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কারাটের নেতৃত্বে কট্টরপন্থী শিবির পিছু হটে, সীতারাম ইয়েচুরির লাইন জয়ী হয়। এখন শুধু বাংলা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করছে। এই নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের মূল সূত্রপাত করেছিলেন কিন্তু পাম অ্যাভিনিউর বাসিন্দাই।

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার ক্ষেত্রে ঘরে-বাইরে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিলেন বুদ্ধদেব। কিন্তু তাঁর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন তোলে বামেরা, দলের অন্দরে হেরে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। ইউএসএ-র সঙ্গে পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করলেও মনমোহন সিং সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে বাংলায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোটের পথ প্রশস্ত করতে একেবারে রাজি ছিলেন না তিনি।

DYFI সম্পাদক থেকে মুখ্যমন্ত্রী, কট্টর পথ কখনও নয়

কিন্তু পলিটব্যুরো থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি— সিপিএমের কট্টরপন্থীদের সামনে সব জায়গাতেই পরাজিত হয়েছিল বুদ্ধদেবের লাইন। ২০০৯-এ বিজয়ওড়ায় সিপিএমের বর্ধিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কারাটদের কট্টরপন্থী লাইনে সিলমোহর দেওয়া হয়। সেই ক্ষোভে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে পলিটব্যুরো বৈঠকে মাঝেমধ্যেই গরহাজির হতে শুরু করেছিলেন বুদ্ধদেব।

২০১১-র ১৩ মে রাজ্যে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয়। সে দিনই দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন বুদ্ধদেব। যদিও তাঁর সেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। গোপালন ভবন বুদ্ধদেবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না-করলেও ২০১১ সালের রাজ্যে পালাবদলের পর দিল্লিতে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *