কোমরে যন্ত্রণা নিয়ে আউটডোরে আসা মইনুদ্দিন আনসারি বলেন, ‘কর্মবিরতির কথা আগে জানলে আসতাম না।’ আর এক রোগী শেফালি কর্মকারও ডাক্তার দেখাতে না পেরে ফিরে যান। তাতে অবশ্য তাঁর আফসোস নেই। তিনি বলেন, ‘আরজি কর নিয়ে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি সমর্থনযোগ্য। আমরাও চাই অভিযুক্তরা দ্রুত ধরা পড়ুক এবং কঠোর শাস্তি পাক।’
যদিও হাসপাতাল সুপার সুজয় মিস্ত্রি বলেন, ‘ইনডোর এবং ইমার্জেন্সি পরিষেবা চালু ছিল। সেখানে রোগী দেখা হয়েছে। বিশেষ করে যাদের অবস্থা ক্রিটিক্যাল তাদের প্রত্যেকেই চিকিৎসা পেয়েছেন।’ ব্যারাকপুর বিএনবসু হাসপাতালে আউটডোর বন্ধ রাখলেও ইমার্জেন্সিতে বসে কিছু চিকিৎসক পরিষেবা দিয়েছেন। পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালেও বন্ধ ছিল আউটডোর। একই অবস্থা ছিল শিল্পাঞ্চলের অন্য হাসপাতালগুলিতেও।
আউটডোর পরিষেবায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও জরুরি বিভাগ চালু রেখে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা সচল রাখেন বারাসত মেডিক্যাল কলেজ, হাবরা এবং বনগাঁ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলার মধ্যে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি বারাসত হাসপাতালে। কর্মবিরতির পূর্ব ঘোষণা থাকায় এ দিন আউটডোরে রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কম ছিল। আউটডোরে প্রায় সব বিভাগেই চিকিৎসক কম ছিলেন।
সঙ্কটজনক রোগীদের পাশাপাশি আউটডোরের অনেক রোগীকেই জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা কম থাকায় সমস্যা হয়নি। জরুরি বিভাগে ডাক্তারবাবুরা পরিষেবা দিয়েছেন।’ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল এবং হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।
কর্মবিরতির কোনও প্রভাব পড়েনি ভাঙড়-২ ব্লকের জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে। এ দিনও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, আউটডোরে রোগী দেখা হয়। প্রসূতি মায়েদের ডেলিভারিও করানো হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাসপাতালে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৩৭৮ জন রোগীর চিকিৎসা করা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনজন প্রসূতির প্রসব করানো হয়।
আরজি কর কাণ্ডের পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে ভাঙড়, রাজারহাট ও নিউ টাউনের একটি অংশের লোকজন জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে ভিড় করছেন। অন্যান্য দিনের তুলনায় গত দু-তিন দিনে হাসপাতালে ডেলিভারি সংখ্যা দৈনিক বেড়ে হয়েছে ৮-১০ জনের। আগে যেখানে দৈনিক ৪-৫ জনের ডেলিভারি হত। বিএমওএইচ হিরণ্ময় বসু বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা কর্মবিরতিতে সামিল না হয়ে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তাই আমাদের হাসপাতালে সমস্ত কাজকর্ম স্বাভাবিক ছিল।’
তবে ভাঙড়-১ ব্লকের নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা। সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ওপিডি বন্ধ থাকলেও ইমার্জেন্সির ডাক্তাররা রোগী দেখেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে যারা বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন তাদের ফিরে যেতে হয়নি বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হয়েছে ক্যানিং-২ ব্লকের মঠেরদীঘি গ্রামীণ হাসপাতালেও। ব্লক স্বাস্থ্য অধিকারিক হরিপদ মাঝি জানান, প্রায় ৩৫০ রোগী হাসপাতাল এসেছিলেন পরিষেবা নিতে। সবাইকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে ইমার্জেন্সি থেকে। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে আউটডোর বন্ধ রাখা হলেও জরুরি পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।