১৭০ বছরের প্রাচীন মন্দির ভেঙে ফেলা হলো রাতারাতি – medinipur 170 year old temple demolished by tmc


এই সময়, মেদিনীপুর: শুধুই কি অজ্ঞতা? নাকি পিছনে অন্য কোনও ‘পরিকল্পনা’? পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে ১৭০ বছরের পুরোনো শিব মন্দিরকে কার্যত গুঁড়িয়ে সেখানে নতুন মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে হরিরামপুরের তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম সমিতি। তার প্রেক্ষিতেই উঠেছে এই প্রশ্ন।নেটিজ়েন বা গ্রামের সাধারণ মানুষের দাবি, নাড়াজোলের রাজার তৈরি এই মন্দিরের গায়ে ছিল অসংখ্য টেরাকোটার কাজ। প্রাচীন এই মন্দিরের টানে আসতেন ইতিহাসবিদ, গবেষকরা। তা আজ শুধুই ভাঙা ইটের স্তূপ। নিন্দার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

কেন, কার নির্দেশে ভাঙা হল মন্দির? দ্বিধা না রেখে গ্রাম পরিচালন কমিটির সদস্য, তৃণমূল নেতা রঞ্জিত বাগ বলছেন, ‘শিবের গাজন, শিবরাত্রির সময়ে পুরোহিত-ভক্তরা ভয়ে ঢুকতে চাইতেন না। মন্দিরে গজিয়ে ওঠা গাছ তিন-চার বার কাটা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম সরকারের উদ্যোগে যদি মন্দিরটি সংস্কার করা যায়। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কোনও উপায় না খুঁজে পেয়ে মন্দির ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই জায়গায় একই রকমের মন্দির তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।’

এ ভাবে ঐতিহ্যবাহী মন্দির ভেঙে ফেলায় পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক, রাজ্য হেরিটেজ কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়দের একাংশ। নাড়াজোলের ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘ দিন চর্চা করছেন দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্দিরের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘অসংখ্য টেরাকোটা সমৃদ্ধ মন্দিরটি বহু গবেষক ও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সম্ভবত উনিশ শতকের মধ্য পর্বে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল! মন্দিরটি আজ শুধুমাত্র ভাঙা ইটের স্তুপ।’

মঙ্গলবার ‘এই সময়’-কে তিনি বলেন, ‘গাছ কেটেও মন্দিরটিকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের কথা না শুনে মন্দিরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘এ বার মার্বেলের নতুন মন্দির তৈরি হলেও মন্দিরের গায়ে থাকা টেরাকোটার কাজগুলি আর কখনই তৈরি করা সম্ভব নয়।’

নাড়াজোল রাজ পরিবারের সদস্য সন্দীপ খানের অভিযোগ, ‘হরিরামপুর শুধু নয়, এরকম অনেক মন্দির তৈরি করেছিলেন নাড়াজোলের রাজা অমরেন্দ্রলাল, মহেন্দ্রলাল ও নরেন্দ্রলাল খান। হরিরামপুরের এই মন্দিরটি রক্ষা করতে সেবায়েত, গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। হঠাৎ করে একদিন দেখি, মন্দিরটি ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন প্রাচীন মন্দির এ ভাবে ভেঙে ফেলা যায় না। জেলাশাসক, পুরাতত্ত্ব বিভাগে অভিযোগ জানাব।’

হরিরামপুর গ্রামটি পড়ে রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে। সেখানকার প্রাক্তন প্রধান অরুণ দোলই এবং বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান অর্চনা সামন্ত, দু’জনেই জানিয়েছেন, মন্দিরটি কেন ভাঙা হয়েছে তা তাঁদের জানা নেই। রাজ-আমলে মন্দির দেখভালের দায়িত্বে ছিল স্থানীয় মণ্ডল পরিবার। তারাই বংশ পরম্পরায় সেবায়েত হিসেবে তা করতেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর পঞ্চাশ আগে তাদের হাত থেকে মন্দিরটি কার্যত কেড়ে নেয় গ্রাম কমিটি।

মণ্ডল পরিবারের প্রসেনজিৎ বলেন, ‘বছর পঞ্চাশ আগে ওই মন্দির গ্রাম কমিটিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। আমার বাবা মহাদেব মণ্ডলকে সকলের সামনে অপমান করা হয়। বাবা মন্দিরের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তবে থেকে গ্রাম কমিটিই দেখভাল করছিল। তারাই নতুন মন্দির তৈরি করার জন্য পুরোনো ওই মন্দির ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *