শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জামিন মামলায় উঠে এল ক’দিন আগে বাড়ি ফেরা কেষ্টর প্রসঙ্গ। ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্যের সূত্র ধরে পার্থর আইনজীবী বললেন, অনুব্রত আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় এক নন। অনুব্রত মণ্ডল একটা গোটা জেলা কন্ট্রোল করেন। পার্থ তা নন। আইনজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য, পার্থ যে প্রভাবশালী নন, সেটা বোঝাতেই আদালতে এমন যুক্তি পেশ করেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আইনজীবী।
ঘটনা হলো, গোরু পাচার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও কেষ্টকে বীরভূমের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। পার্থকে কিন্তু মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর পাশাপাশি দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। যদিও এখনও তিনি বিধায়ক পদে রয়েছেন। ইডির পাশাপাশি শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের মামলাতেও তিনি অভিযুক্ত। এ দিন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে তাঁর জামিনের মামলায় শুনানি চলছিল।
জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রীর আইনজীবী বলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন দলেও নেই।’ পার্থর আইনজীবীর সওয়ালের মাঝে কারও নাম না-করে বেঞ্চ বলে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে তো বীরভূমের একজন জামিন পেয়েছেন (গোরু পাচারে সিবিআইয়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান কেষ্ট, ইডির মামলায় জামিন দেয় দিল্লির রাউজ় অ্যাভিনিউ কোর্ট)। তিনি তো আবার দলে যোগ দিয়েছেন (বৃহস্পতিবারই বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির সঙ্গে মিটিং করেছেন কেষ্ট)। জামিন পাওয়ার পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও যোগ দিতে পারেন (দলে)।’
আইনজীবী তখন যুক্তি দেন, ‘আপনি অনুব্রত মণ্ডলের কথা বলছেন! অনুব্রতর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তুলনা করবেন না। অনুব্রত বিধায়ক নন। অনুব্রত একজন রিমোট কন্ট্রোলার। তিনি গোটা বীরভূম কন্ট্রোল করেন।’ দু’বছর এক মাস ১৩ দিন বাদে বীরভূমের বাড়িতে ফেরার পরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা কেষ্টকে কার্যত বীরের সম্মান দিয়ে বরণ করেন। বৃহস্পতিবার বীরভূমের জেলা তৃণমূল পার্টি অফিস থেকে কোর কমিটির সদস্যদের ছবি সরিয়ে আবার ফিরেছে অনুব্রতর ছবি। ফের বীরভূমে দলের হাল ধরার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
আইনজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, পার্থও জামিন পেলে আবার কেষ্টর মতো দলের কাজে ফিরতে পারেন বলে এ দিন বোঝাতে চেয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার সময়ে রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে প্রশাসনের দায়িত্বশীল জায়গায় ছিলেন বলে আদালত মনে করানোয়, তাঁর আইনজীবীর পাল্টা যুক্তি, অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা মণীশ সিসোদিয়ারাও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং জামিন পেয়ে এখনও দলে পূর্ণ মহিমায় আছেন তাঁরা। তাঁদেরও তো জামিন পেতে সমস্যা হয়নি।
শিক্ষায় দুর্নীতি মামলায় আর এক অভিযুক্ত, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহার আইনজীবী এ দিন আদালতে বলেন, ‘এই মামলায় অন্য অনেকে অভিযুক্ত থাকলেও সিবিআই বেছে বেছে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।’ শুনানির শুরুতে সিবিআইয়ের তরফ থেকে কিছুটা সময় চাওয়া হয়।
সিবিআই কৌঁসুলির উদ্দেশে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘আপনার মক্কেল জেলে নেই, তাই আপনাদের তাড়া নেই। তার মানে এই নয় যে, আমরা জামিনের পক্ষে বলছি।’ এর পরেই আদালতের নির্দেশ, ১ অক্টোবরের মধ্যে সিবিআইকে তাদের বক্তব্য লিখিত ভাবে দিতে হবে মামলায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে। সিবিআইয়ের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আবেদনকারীদের কোনও যুক্তি থাকলে ৩ অক্টোবর বেলা ১টায় তাঁরা জানাবেন। তারপর হবে পরবর্তী শুনানি।