সুন্দরবনের মোট নদীবাঁধ ৩৫০০ কিলোমিটার। আয়লার দাপটে প্রায় ৭৭৮ কিলোমিটার নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। সেই বাঁধের কোনও চিহ্নই ছিল না। তৎকালীন বাম আমলে সুন্দরবনে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। তার জন্য ৫০৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সরকারের পালা বদলের পরে জমি জটের কারণে সেই কাজ বাস্তবায়িত হয়নি। অল্প কিছু জায়গায় নামমাত্র কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আর অধিকাংশ জায়গায় বাঁধগুলি আজও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
এলাকার মানুষ জানান, তাই আয়লার পর যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে তাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকা। নদীতে মিশেছে বাঁধ। ভেঙে নদীতেই পড়েছে মাটির বাড়ি। চাষের জমি নষ্ট হয়েছে। নোনা জলে নষ্ট হয়েছে চাষ করা মাছও। সুন্দরবনের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার দাবিও জানিয়েছে কম-বেশি সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়নি। যার জন্য ভুগতে হচ্ছে সুন্দরবনবাসীকে। কার্যত ভিটে হারিয়ে সুন্দরবনের কয়েক লক্ষ মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে আজ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন। সেই অবস্থার মধ্যে আবারও বিপদের হাতছানি নিয়ে এসেছে ঘূর্ণিঝড় দানা। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই আতঙ্কে ভুগছেন সুন্দরবনবাসী। মালতী মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে যাব কোথায়? প্রত্যেকবার ঝড়ে ঘর ভাঙে না হলে ঘরের মধ্যে জল ঢুকে যায়। ওই অবস্থায় আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। এ বারও হয়তো আমাদের একই অবস্থা হবে।’
বুধবার কুলতলির কৈখালি এলাকার নদীবাঁধের অবস্থা দেখতে আসেন কুলতলির বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল ও কুলতলি থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজ। বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘কুলতলির কৈখালি-সহ চারটি জায়গায় নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ। সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে মেরামত করা হয়েছে। তবে ত্রাণ শিবিরগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছে। মজুত রাখা হয়েছে ত্রাণ সামগ্রীও। সবদিক থেকে আমরা প্রস্তুত।’ এ দিন বাসন্তীর হোগল নদী-সহ বিভিন্ন জায়গার নদীবাঁধ পরিদর্শন করেন প্রশাসনের লোকজন। বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘নদীবাঁধের যে জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত, তা দ্রুত ঠিক করা হচ্ছে। সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা রয়েছেন।’ গোসাবার সুন্দরবন উপকূল থানার পুলিশ ও কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ উপকূল থানার পুলিশ স্থলপথে ও জলপথে মাইকে প্রচার চালিয়ে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে।