পার্থ চৌধুরী: এক যে আছে শিয়াল। সে মনের খেয়ালে একদিন চলে এল বনের ধারে। প্রকৃতি- প্রেমিক অর্ণবের ক্যামেরায় ধরা পড়ে গেল । এই এলাকার বুনো খরগোশ, শিয়ালের ঝাঁকের খবর রাখেন অর্ণব। চমকে দেওয়ার মত ঘটনা। এই শিয়াল একেবারে সাদা।ধবধবে সাদা। গোটা শরীরেই সাদা। খুব, খুবই বিরল। অর্ণব জানিয়েছেন, গত শীতেই প্রথম দেখা মেলে সাদা শিয়ালের। এবারেও দেখা পাওয়া যাবে হয়ত শিগগিরই। বিশিষ্ট পশু চিকিৎসক ডা: জয়ন্ত ঘোষ জানিয়েছেন, এটা সম্ভবত অ্যালবিনো শিয়াল। প্রকৃতির খেয়ালে এরকম হয়ে থাকে।
বর্ধমানের কাঞ্চননগর একসময় ছুরি কাঁচির জন্য বিখ্যাত ছিল। একসময় বর্ধমানের রাজধানী ছিল এই এলাকায়। পরবর্তীতে এই এলাকা কার্যত নজরের আড়ালে চলে যায়। একসময় এখানকার ঝোপ জঙ্গলে ময়ূর ঘুরে বেড়াত। এখানে রয়েছে বাঁকা নদী। তার পাশে একটি সাইফন রয়েছে। রয়েছে জলা। রয়ে গেছে বেশ কিছু বন্যপ্রাণী। অনেক গাছপালা। রয়েছে প্যারালাল মিনি ইকো সিস্টেম।
গত দু-এক বছরে বিশেষত লকডাউনের পর বেশ কিছু বন্যপ্রাণী দেখা গেছে। দেখা গেছে বুনো খরগোশ। দেখা গেছে অ্যালবিনো শিয়াল। আছে অজস্র গোসাপ, বেজি, আরও নানা বন্যপ্রাণী। গাছ এবং জলায় আছে বহু কম দেখতে পাওয়া পাখি। আছে নানারকম মাছেদের প্রজনন কেন্দ্র। কচ্ছপ,সজারু,প্রজাপতি আর রাতের শোভা অজস্র জোনাকির আলো। কাঞ্চননগর এলাকার একটি স্কুলে রয়েছে প্যাঁচাদের কলোনি।
এইসব নিয়ে এই এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাণীবন্ধু অর্ণব দাস, প্রাণীবিদ ও শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত এই নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণাপত্র ইতোমধ্যে বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত। এই নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে পর্যটন, বনদফতর। আগ্রহ রয়েছে প্যাঁচা কলোনি নিয়ে। এরপর আরও একটি এলাকাকে কেন্দ্র করে এই পরিবেশকানন গড়া গেলে একসাথে অনেক কাজ হতে পারে। পরিবেশ বাঁচবে। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের সংরক্ষণ হবে। ছাত্রছাত্রীরা হাতেকলমে প্রকৃতির পাঠও পাবে।
এলাকায় প্রাণীদের বন্ধু সুভাষচন্দ্র। আর আছেন পশুপ্রেমিক অর্ণব। পাখিদের তারা চেনেন। প্যাঁচারা তাঁদের ডাকে সাড়া দেয়। কথা শোনে। খায়-দায়, বাচ্চা দেয়। স্কুলে এখন গোটা ত্রিশেক প্যাঁচার সংসার। অগাস্ট থেকে শুরু হয়েছে প্রজননকাল। স্কুলের নাম ডি এন দাস হাইস্কুল। ঠিকানা বিখ্যাত কাঞ্চননগর। এককালে ছুরি কাঁচির জন্য খ্যাত এই অঞ্চলে এখন পেঁচারাই আকর্ষণ।
শুধু প্যাঁচাই নয়, স্কুলের বটগাছকে মাঝে রেখে তৈরি হয়েছে পাখিরালয়। আছে ছাতারে, গোলা পায়রা, শালিক, চড়ুই। আর আছে কাঠবিড়ালি, মেঠো ইঁদুর, ছুঁচো, বেজি। নানারকম সাপ। আছে একগাদা বাদুড়, চামচিকে। তরুণ, অর্ণবকে নিয়ে এদের দেখভাল করেন সুভাষবাবু। এই এক্সপেরিমেন্ট এখন সফল। অনেকে এও মনে করেন, পরিবেশ নিয়ে যত্ন নিলে আবার ফিরে আসতে পারে কাঞ্চননগরের একদা বিখ্যাত ময়ূরেরা।
এলাকার বিকাশে আর কী কী সম্ভব, তা অবশ্যই দেখার। দরকার সঠিক পরিকল্পনা। প্রয়োজনে অর্থের সংস্থান। তবে সুভাষবাবু এবং অর্ণব মনে করেন, এখানে ইকো টুরিজম কেন্দ্র হতে পারে। প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা কেন্দ্র হতে পারে। ফলের গাছ লাগিয়ে, মাছ চাষ করে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান করা যেতে পারে। সন্ধ্যের পর জোনাকির মেলায় সেজে ওঠে এই এলাকা। তাই নাইট ট্যুরিজমও হতে পারে।
তাঁদের কথায় এখানে এখনও আছে নুড়ি পাথর বিছানো রাস্তা। দুদিকে ঝোপঝাড়, জঙ্গল। হতেই পারে এটা আর একটা শান্তিনিকেতন! হয়ে উঠতে পারে পরিশ্রান্ত পথিকের নিরালায় একান্ত আশ্রয়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)