নির্জন অন্ধকার রাস্তায় গরুর গাড়ির শব্দ কোথা থেকে আসছে? তারপর গোটা পথটায়…। Shah Chand Shah Chand Kirmani purba bardhaman Shah Chands astonishing incidents


পার্থ চৌধুরী: তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মাজার আকর্ষণ এই এলাকার। পূর্ব বর্ধমানের একলক্ষীর শাহচাঁদ কিরমানির মাজার ঘিরে লোককথা ও রহস্যের অভাব নেই। তবু সাধকদের বাণী আজও ধর্মপ্রাণ  মানুষকে টানে। এই এলাকায় হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুসলিম জনবসতি কম। তবু বাড়িতে নতুন কিছু হলে এই মাজারে তা না দিলে এই অঞ্চলের মানুষের মন ভরে না।

আরও পড়ুন: Tropical Cyclones: ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে দুই ঝড়? হাওয়ার বেগ হতে পারে ১৭০ কিমি প্রতি ঘণ্টা? জেনে নিন, ‘রে’, ‘০নাইনএফে’র হাল…

কে এই শাহচাঁদ? একটু শাহচাঁদ সাহেবের মহিমার কাহিনি শোনা যাক। এলাকার বাসিন্দা শেখ হাসেন আলি জানান, শাহচাঁদ সাহেব শৈশবে খুব দুরন্ত ছিলেন। গ্রামের শশাক্ষেত থেকে অর্ধেক শশা খেয়ে বাকিটা রেখে দিতেন। এই নিয়ে অভিযোগ করা হলে অভিভাবকরা গিয়ে দেখেন, কোথায় কী? গোটা শশাই গাছে ঝুলছে। একবার বহু দূরবর্তী মামাবাড়ির গ্রামে একবার আগুন লেগেছিল। নিজের অলৌকিক ক্ষমতায় সে বিপদ কাটিয়ে দেন শাহচাঁদ। প্রচলিত আছে, একটি ডোবায় কুমিরের ছাল গায়ে দিয়ে দীর্ঘদিন সাধনা করেন তিনি। তারপর উঠে এলে তাঁর নিঃশ্বাসে আশেপাশের সব কলাগাছ পুড়ে যায়। এক ব্যবসায়ী চোর ও লুঠেরাদের ভয়ে রাস্তা পেরোতে ভয় পাচ্ছিলেন। এসময়ে শাহচাঁদকে স্মরণ করেন তিনি। একটি গোরুর গাড়ির অলৌকিক শব্দ তাঁকে গোটা পথ নিরাপদে পার করিয়ে দেয়।

এখানকার মসজিদ কমিটির সভাপতি বাদশা আলম জানান, এই এলাকার মাহাত্ম্য অসীম। বহু দূর থেকে, এমনকি অন্যান্য জেলা থেকে বহু দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। তবে কালের নিয়মে এই ঐতিহাসিক স্থানের ভগ্নদশা। আগে কয়েকবার সরকারি স্তরে আবেদন করা হয়েছে। সরকারিভাবে এই স্থানের রক্ষণাবেক্ষণ চান এলাকার মানুষজন।

শাহচাঁদের মাজারের গুরুত্ব– সৈয়দ শাহচাঁদ কিরমানি ছিলেন কিরমানি বংশের ৩৩তম বংশধর। এই বংশের পূর্বপুরুষ শাহ সুজা কিরমানি (১০১০-১০৭৪ খ্রিস্টাব্দ) পারস্য থেকে ভারতে আসেন এবং তার আধ্যাত্মিক প্রভাব সুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। শাহ চাঁদ কিরমানি ছিলেন একাধারে আধ্যাত্মিক গুরু ও বীর যোদ্ধা। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে একলক্ষী গ্রামের পাঠান ও মুঘল দুর্গের এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি। এই দুর্গ এলাকায় তখন পাঠান ও মোগলদের সামরিক ঘাঁটি ছিল। মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি এখানে আধ্যাত্মিক কার্যক্রম শুরু করেন শাহ চাঁদ কিরমানি। যা দ্রুত আশপাশের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে।

শাহচাঁদ কিরমানির মাহাত্ম্য শুধুমাত্র বর্ধমান ও দক্ষিণ দামোদর এলাকায় নয়, সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। এই মসজিদে আজও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রার্থনার জন্য আসেন এবং সুফি দর্শনের শান্তি ও একতার বার্তা লাভ করেন। মসজিদে আজও সংরক্ষিত রয়েছে সৈয়দ শাহ চাঁদ কিরমানির ব্যবহৃত বর্ম, লোহার শিরস্ত্রাণ, লোহার চেনের জামা, চিমটে এবং পাশবালিশ। এগুলি মসজিদটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। 

আরও পড়ুন: Tangra Murder Case: নাবালকের বয়ানের ভিত্তিতেই প্রসূন দে’কে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নেবে পুলিস? নাকি…

বিশেষত, মসজিদের সংলগ্ন কবরস্থানটি স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, এটি একসময় পাঠান বা মুঘল সেনাবাহিনীর দুর্গ ছিল। জামে মসজিদটির স্থাপত্যে মুঘল ও পাঠান শৈলীর প্রভাব স্পষ্ট। এর প্রাঙ্গণ শান্ত পরিবেশে ঘেরা। দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এটি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় স্থান। বর্ধমান জেলার একলক্ষীর জামে মসজিদ শুধুমাত্র এক ধর্মীয় স্থান নয়, এটি বাংলার ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নিদর্শন। মসজিদ ও খানকা শুধু স্থানীয় মুসলিম সমাজের নয়, গোটা অঞ্চলের সম্প্রীতি ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনের প্রতীক। সৈয়দ শাহ চাঁদ কিরমানির জীবন ও আদর্শ আজও মানুষের হৃদয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *