সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: তাঁর অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ আপামর বাঙালি। সিনেমা থেকে সিরিজ, এই বছরে স্ক্রিন জুড়ে রয়েছেন তিনি। তাঁর অভিনয় নিয়ে সবাই প্রশংসা করলেও তাঁর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তৈরি হয় নানা তর্ক বিতর্ক। তিনি ঋত্বিক চক্রবর্তী। স্বাধীনতা দিবসে হইচই ওয়েবসিরিজে আসছে তাঁর নতুন সিরিজ অচিন্ত্য আইচ। তার আগেই সাক্ষাত্কারে উঠে এল নানা কথা। ন্যায় থেকে স্বাধীনতা, কীভাবে ভাবা প্র্যাকটিস করেন ঋত্বিক?
প্র: অচিন্ত্য আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগত, এই সিজনে কি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠল?
ঋত্বিক: হ্যাঁ, অচিন্ত্য আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগত কারণ ওর একটা ট্রমা ছিল। অনেক কম বয়সে মাকে হারায়, একটি মেয়ের আত্মহত্যা, সব মিলিয়ে ওর ট্রমার কথা আগের সিরিজেই বলা হয়েছে। তবে আগের কেস জয়ের পর অচিন্ত্যর আত্মবিশ্বাস ফিরেছে।
প্র: অচিন্ত্য উকিল কিন্তু পেশার কারণে কখনও অন্যায় মেনে নেয় না, ন্যায়ই চায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা দেখছি, ন্যায়ও আপেক্ষিক হয়ে গেছে। তোমার কাছে ন্যায়ের সংজ্ঞা কী?
ঋত্বিক: ন্যায়ের দুটো দিক রয়েছে। এক আমাদের ব্যক্তিগত নৈতিকতা আর অন্যদিকে আইন যে যে প্যারামিটার তৈরি করেছে, সে সেই দিক দিয়ে ন্যায় ঠিক করে। এই দুটো কখনও এক রেখায় চলে না। আইন তার পথ দিয়ে দেখবে, মানুষ যেভাবে বড় হয়েছে সেভাবেই দেখে। আমি অনেক উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা কিন্তু আইন কীভাবে দেখছে, সেটাই ফোকাস। তবে আইনও চায় ন্যায়ই দিতে, যাতে একজন নির্দোষও যেন শাস্তি না পেয়ে যায়। অতএব এটাই উদ্দেশ্য। যদিও প্রসেসে ভুল ভ্রান্তি ঘটে যায়, শুধু ভারতে নয়, সারা পৃথিবীতে এর নজির রয়েছে।
প্র: দ্বিতীয় সিজনের গল্প ঘুরছে একটি ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে, আইন করে কি সত্যিই ধর্ষণ আটকানো সম্ভব? কীভাবে এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূল করা যায় বলে মনে হয়?
ঋত্বিক: আইন থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তবে পাশাপাশি এটাও আমরা জানি শাস্তি অপরাধকে কমায় না। আইন হওয়া ভীষণ দরকার। কড়া আইন হওয়া জরুরি।
প্র: আরজিকর ঘটনায় এক বছরেও বিচার পাওয়া গেল না, এই প্রতিবাদে ফের মেয়েরা রাতদখলে। অনেকেই প্রতিবাদ করে করে নিরাশ, আপনি কী বলবেন?
ঋত্বিক: নিরাশ হওয়ার অনেক উপাদান থাকলেও আমার মনে হয়, এতটাও নিরাশ হওয়ার সময় আসেনি। আর আমাদের দেশে ন্যায় পেতে সময় লাগে। এত তাড়াতাড়ি মামলা নিষ্পত্তি হয় না। যদিও আমি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি নই। আর মানুষ সব অপরাধের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানায় না, যে বিষয়ের সঙ্গে সে একাত্ম হতে পারে, তা নিয়েই ক্ষোভ জানায়। এই বিষয়টার সঙ্গে মানুষ একাত্ম হতে পেরেছে। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। আইন চাইলেও সিস্টেম রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করতে ভালোবাসব যে সিস্টেমও চায়, অপরাধীরা শাস্তি পাক।
প্র: এই বছরে আপনার সিরিজের পাশাপাশি অনেক সিনেমাও রিলিজ করছে। কিন্তু স্ক্রিন পাওয়া নিয়ে একটা সমস্যা এতদিন চলছিল। এবার সেই সমস্যা মিটল?
ঋত্বিক: বাংলা ছবির প্রাইম টাইম শো পাওয়া অবশ্যই উচিত। কিন্তু বাংলা সিনেমাকে ঘিরে যে আরও সংকট রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কারণ এখানে বহুমাত্রিক সমস্যা রয়েছে। আমি সবকিছু বুঝি, এমনটাও নয়। সমস্যাগুলো ফলাফল আমরা ভোগ করি। যেমন কাজ কমে যাওয়া। তবে এগুলোর সমাধান তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে যাঁরা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ, যাঁরা ইন্ডাস্ট্রি চালান।
প্র: আপনার হাতের পুতুল কোথায় গেল?
ঋত্বিক: হাতের পুতুলকে অনেকদিন আনা হয়নি। তাত্ক্ষণিক নানা বিষয়ে মনে হয়, ওকে আনি। কিন্তু অনেকদিন সেই প্রয়োজন মনে হয়নি। তবে ওটা খুবই ভালো। আমিও মিস করি ওকে।
প্র: সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি নানা বিষয়ে মতামত দেন, তা থেকে তর্ক-বিতর্কও শুরু হয়। কখনও কি মনে হয়েছে যে এই কারণে ফ্যানেরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাচ্ছে?
ঋত্বিক: আমার মনে হয় না। কারণ আমাকে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরা আমার অভিনয়ের জন্য পছন্দ করেন। আমার চিন্তা ভাবনা তাঁরা সমর্থন করবেন, এটা মনে করি না। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় সব শেয়ার করি, বেড়াতে যাওয়ার ছবিও পোস্ট করি, নানা মতামত শেয়ার করি। যখন যে বিষয়ে বলতে ইচ্ছা করে, সেটা বলি। সে হয়তো আমাকে বুঝতে পারছেন না। এখন যদি কেউ হাফ বুঝে কোনও সিদ্ধান্ত নেন, তার ব্যাপার। তবে আমি কখনও কোনও অভিনেতাকে এভাবে বিচার করিনি।
প্র: রাত পোহালেই স্বাধীনতা দিবস। তোমার কাছে একজন শিল্পীর স্বাধীনতা কী?
ঋত্বিক: যদিও আমাদের দেশ পরাধীনতা থেকে স্বাধীন হয়েছিল। তবে আমার কাছে স্বাধীনতার মানে হচ্ছে, আমাদের দেশের সংবিধানে নাগরিকদের যে যে স্বাধীনতার কথা উল্লেখ আছে, যেমন বাকস্বাধীনতা, সেটাই আমার কাছে স্বাধীনতা।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)