জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ঠিক সাত দিন আগে এশিয়া কাপের (India vs Pakistan Asia Cup 2025) গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে হেলায় হারিয়েছিল ভারত। ২৫ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে ম্যাচ বার করে নিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদবরা (Suryakumar Yadav)। সাত দিন পর এবার সুপার ফোরে মুখোমুখি হল দুই দেশ (India vs Pakistan Asia Cup 2025 Super 4 Match)। এবারও সলমান আঘাদের সঙ্গে একই আচরণ করলেন সূর্যরা। ভারত এবার জিতল ৬ উইকেটে। টি-২০ সংস্করণে এটাই ভারতের রান তাড়া করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জয়।
করমর্দন থেকে বিরতই…
আগের দেখায় পাকিস্তান টস জিতে ব্যাট নিয়েছিল। আর এবার সূর্যকুমার টস জিতে ফিল্ডিং নিলেন। যদিও সলমান জানালেন তিনিও জিতলে একই কাজ করতেন। গ্রুপ পর্বে টসের সময়ে বা খেলার পরে ভারত প্রথামাফিক করমর্দন না করায় বিস্তর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। খেলার শেষে সূর্য জানিয়ে ছিলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে করমর্দন না করার সিদ্ধান্ত আমাদের দলীয় বিষয়। আমরা এখানে কেবল খেলতেই এসেছিলাম। আমরা মাঠে তাদের উত্তর দিয়েছি। দেখুন কিছু জিনিস স্পোর্টসম্যানশিপের বাইরে থাকে। আমরা এই জয় আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে উৎসর্গ করছি যাঁরা ‘অপারেশন সিদুঁর’-এ অংশ নিয়েছিল। পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাসী হামলার শিকার হয়েছে যে পরিবারগুলি, আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এদিনও সেই রীতিই বজায় রাখল ভারত। সলমানকে এড়িয়ে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টের সঙ্গে হাত মেলান সূর্য।
আরও পড়ুন: বিরাটের প্রথম অধিনায়ক, আইপিএল খেলেছেন সৌরভ-ধোনির নেতৃত্বে, এবার বোর্ড প্রেসিডেন্ট!
পাকিস্তান ইনিংস
পাকিস্তান টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৭১ রান করল! ঘটনাচক্রে পাকিস্তানকে তা করতে দিল ভারতই। যেভাবে অভিষেক শর্মা, কুলদীপ যাদব ও শুভমন গিলরা নিজেদের মধ্যে ক্যাচ ফস্কানোর প্রতিযোগিতায় মেতেছিলেন, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। কে বলবে এই দলটার সঙ্গেই রয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডিং সাইড। হতশ্রী ক্যাচিং, বিশ্রি ফিল্ডিং, তেমনই বোলিং! গত ম্যাচে ওমানকে ঠিক যেরকম হাল্কা ভাবে নিয়েছিল ভারত, এদিনও সূর্যদের হাবভাব তেমনই ছিল। পাকিস্তানের ১৭১ রানের মধ্যে ওপেনার শাহিবজাদা ফারহান সিংহভাগ রান করেছেন। ৪৫ বলে ৫৮ রান করেছেন তিনি ৫ তার ও ৩ ছয়ের সুবাদে। অথচ পাক ইনিংসের তৃতীয় বলেই হার্দিকের ওভারে তিনি ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে পারতেন, ডিপ থার্ডে অভিষেক ক্যাচ মিস না করলে শাহিবজাদার ইনিংস ওখানেই শেষ হয়ে যেত। এমনকী অষ্টম ওভারেও তিনি ফিরে যেতে পারতেন। লং অফের উপর দিয়ে তাঁর ওড়ানো ছক্কা অভিষেক যদি তালুবন্দি করে নিতে পারতেন, তাহলে গল্প আলাদা হতে পারত। পাকিস্তান এদিন রীতিমতো ভারতকে চাপে রেখেছিল। যেভাবে হার্দিক পাণ্ডিয়া, জসপ্রীত বুমরা ও কুলদীপ যাদবদের দেখে তেড়ে যাচ্ছিলেন পাক ব্যাটাররা, তাতেই মনেই হচ্ছিল শেষবারের সাক্ষাতের সমীকরণ তাঁরা বদলাতে চান। ভারতকে কোথাও ‘ওভার কনফিডেন্স’ই চাপে ফেলে দিয়েছিল। সাহেবজাদা ছাড়া সাইম আয়ুব ও মহম্মদ নওয়াজ কুড়ির গণ্ডি পার করেছেন। অথচ এই সাইমের লোপ্পা ক্যাচ কুলদীপ যাদব ফেলেছেন বরুন চক্রবর্তীর ওভারে শর্ট ফাইন লেগে। পাকিস্তানের বাকিরা সকলেই কুড়ির ভিতরে ছিলেন। ভারতের হয়ে দুই উইকেট পেয়েছেন শিবম দুবে। হার্দিক-কুলদীপের ঝুলিতে এসেছে একটি করে উইকেট। এদিন শিবমই ভালো বল করলেন। ১৯ নম্বর ওভারেও ভারত কাচ হাতছাড়া করা জারি রেখেছিল। বুমরার ওভারে শুভমন গিল যেভাবে ফাহিম আশরাফের লোপ্পা ক্যাচ মিস করলেন, তা চোখে দেখা যায় না।
ভারতের ইনিংস
১৭২ রানের টার্গেট নিয়ে ঠিক যে খেলাটা শুরুতে দরকার ছিল, সেটাই খেলতে শুরু করেছিলেন দুই বন্ধু- অভিষেক শর্মা ও শুভমন গিল। দুই পঞ্জাব পুত্তরই বিধ্বংসী মেজাজে বোলার নিধন যজ্ঞে মেতেছিলেন। স্পিনার-পেসার কিছুই দেখছিলেন না তাঁরা। দ্যাখো আর মারো, এই যেন ছিল তাঁদের মন্ত্র। পাওয়ারপ্লে-তেই তুলে দিয়েছিলেন ৬৯ রান। ৯ ওভারের মধ্যে সেই রান অনায়াসে ১০০ ছুঁয়ে ফেলে… এরপর ২৮ বলে ৪৭ রানের মারকাটারি ইনিংস খেলে ফিরে যান শুভমন গিল। ফাহিম আশরাফের বলে বোল্ড হয়ে যান শুভমন। তিনে নেমে সূর্যকুমারও আসেন আর চলে যান। ডিপ থার্ডের উপর দিয়ে উড়িয়ে খেলতে গিয়ে অধিনায়ক হারিস রউফের বলে আবরার আহমেদের হাতে জমা পড়ে যান। ১১ ওভারের ভিতর ভারতের ২ উইকেট চলে যায় ১০৬ রানে। ১৩ নম্বর ওভারে অভিষেকও ফিরে যান চালিয়ে খেলতে গিয়ে। আবরারের গুগলি তুলে খেলতে গিয়ে তিনি হারিসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। অভিষেকের ৩৯ বলে ৭৪ রানের বিধ্বংসী শেষ হয়। এদিন ১৮৯.৭৪-এর স্ট্রাইক রেটে ৬টি চার ও ৫টি ছয় মেরেছিলেন ভারতের ওপেনার। অভিষেক যখন ফেরেন তখন ভারতের স্কোরবোর্ডে ১২.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১২৩। ভারতের এই স্কোয়াডে ব্যাটারের কোনও অভাব নেই। অভিষেক-শুভমন-সূর্য নিভলেও সঞ্জু স্যামসন, তিলক ভার্মারা ছিলেন। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ধীরে-সুস্থে ম্যাচ বার করে আনছিলেন। কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন হয়! হারিসের বল স্যামসনের স্টাম্প ছিটকে দেয়। তখন ভারতের বাকি ছিল ২০ বলে ২৪। ওমানের বিরুদ্ধে দারুণ খেলা স্যামসন একদম উইকেট টু উইকেট ডেলিভারিতেই উইকেট দিয়ে আসেন। ১৭ বলে ১৩ রান করে ফেরেন কেরালার ক্রিকেটার। এরপর তিলকের সঙ্গ দিতে আসেন হার্দিক। হারিসের ফেস করা প্রথম বলই বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে সাময়িক চাপটা শুষে নেন তিনি। ১৮ বলে ভারতের ১৯ রান বাকি ছিল। কিছুটা হলেও খেলায় টেনশন জুড়েছিল। কিন্তু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দুই সতীর্থ হার্দিক-তিলক পাকিস্তানকে মাথায় চাপতে দেননি। শেষ দুই ওভারে জয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ৯। ছক্কা-চার হাঁকিয়ে খেলা বার করে আনেন তিলক। তিনি ১৯ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। হার্দিকের যোগ ৭ রান।
আরও পড়ুন: ‘দলে সবাইকে…’ ! ভারত-পাক ম্যাচের আগেই স্যামসনের বজ্রনিনাদ! গম্ভীরের সংসারে কী চলছে?
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)