অয়ন শর্মা: ডাক্তার শান্তনু সেনের বিদেশি ডিগ্রি বিতর্ক! সেই বিতর্কে এবার আসরে রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জেনস অফ গ্লাসগো। এফআরসিপি গ্লাসগো-র তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল যে শান্তনু সেনের ডিগ্রি কোনওভাবেই ভুয়ো নয়। বরং তা তাঁর অর্জিত। ডিগ্রি প্রধানকারী সংস্থা এফআরসিপি গ্লাসগো-র রেজিস্টারের তরফে এপ্রসঙ্গে মেইল করা হয় শান্তনু সেনকে। সেই মেইলে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালে FRCP গ্লাসগোর তরফে তাঁকে এই ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছিল। তিনি পরীক্ষা দিয়ে এই যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
সূত্রের খবর, এই সমস্ত তথ্যই ডাক্তার শান্তনু সেনের তরফ থেকে রাজ্যের মেডিকেল কাউন্সিলে জমা করবেন তিনি। প্রসঙ্গত, এই FRCP গ্লাসগো–র দেওয়া ডিগ্রিটিকে ভুয়ো বলে দাবি করেছিল রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিল। এমনকি ডাক্তার হিসেবে শান্তনু সেনের রেজিস্ট্রেশনও ২ দু বছরের জন্য বাতিল করা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে অবশ্য রেজিস্টেশেন বাতিলের সেই নির্দেশ বাতিল করে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওদিকে রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জেনস অফ গ্লাসগো-র তরফে করা ইমেইলের প্রেক্ষিতে জি ২৪ ঘণ্টাকে দেওয়া একান্ত টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে ডাক্তার শান্তনু সেন জানিয়েছেন, ডিগ্রিটি যে ভুয়ো নয়, সেটি রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলকে FRCP গ্লাসগো–র তরফেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ মেইলে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলও আছে। পাশাপাশি তিনি তোপ দাগেন, এই পুরোটাই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা।
প্রসঙ্গত, গ্লাসগোর সাম্মানিক ডিগ্রি ‘ভুয়ো’ বলে দাবি তুলে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয়। দু’বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয় শান্তনু সেনকে। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল অভিযোগ করে শান্তনু সেনের ডিগ্রির বিষয়টি স্পষ্ট নয়। মেডিক্যাল কাউন্সিলের অভিযোগ ছিল, কাউন্সিলে নথিভুক্ত নয়, এমন ডিগ্রি ব্যবহার করছিলেন এই চিকিত্সক নেতা। ডিগ্রির বিষয়টি স্পষ্ট করে তিনি তাঁর প্রফেশনাল লেটার হেডেও লেখেননি ডা. সেন। এই নিয়ে প্রথমে শান্তনুকে নোটিস ধরিয়েছিল কাউন্সিল। তারপর তাঁকে তলব করা হয়েছিল। শেষে কাউন্সিল শান্তনুর ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন দু’বছরের জন্য বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
উল্লেখ্য, ডাঃ শান্তনু সেন নিজে একসময় রাজ্য় মেডিক্যাল কাউন্সিলে সরকারের মনোনীত সদস্য ছিলেন। কিন্তু আরজি কর কাণ্ডে তৃণমুলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে। তখন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। ২০২৫-এর জানুয়ারি দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য তাঁকে তৃণমূল থেকেও সাসপেন্ড করা হয়। ওদিকে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। কাউন্সিলের বক্তব্য ছিল, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত। এরপরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শান্তনু সেন।
হাইকোর্টে মেলে প্রাথমিক স্বস্তি। প্রথম শুনানিতেই হাইকোর্ট তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্দেশ খারিজ করে দেয়। বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দেন, লেটার হেডে ডিপ্লমা ফেলোশিপ হিসেবে পরিচয় দিতে হবে। মামালকারীকে তাঁর বক্তব্য বলার জায়গা দিতে হবে। কী কারণে কাউন্সিল এমন স্বত:প্রণোদিত পদক্ষেপ নিল সেটাও জানাতে হবে মামলাকারীকে। কারণ কী কারণে অভিযোগ, সেটাও জানানো হয়নি মামলাকারীকে। এবার একেবারে ডিগ্রি প্রদানকারী এফআরসিপি গ্লাসগোর তরফেই মিলল তাঁর ডিগ্রির সার্টিফিকেট!
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
