Dengue Symptoms : অতি চিকিৎসায় বিপত্তি ডেঙ্গি রোগীদের – expert doctors and health officials said the cause of dengue patient lost life


অনির্বাণ ঘোষ

ডেঙ্গি তো আছেই৷ এখন তার দোসর অতি-চিকিৎসার গেরোও!
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, বিনা নজরদারিতে লাগাতার স্যালাইন আর অপ্রয়োজনে প্লেটলেট দেওয়ার জেরে বহু রোগীর প্রাণসংশয় হচ্ছে রোজ৷ এর মধ্যে ফুসফুসের ভিতর জল জমে, হার্ট ফেলিয়োর হয়ে কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের সন্দেহ, এমন নজির সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ঘটছে বেসরকারি হাসপাতালে৷ কেননা, অধিকাংশ ডেঙ্গি-মৃত্যুই হচ্ছে বেসরকারি ক্ষেত্রে।

Dengue Fever : দেরি হচ্ছে ডেঙ্গি চিনতে,বড়ো বিপদ সেখানেই
মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গিতে শরীরের জলশূন্যতা স্বাভাবিক ঘটনা৷ রক্তে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট কমে যাওয়াও তাই৷ কিন্তু কখন কতটা স্যালাইন চলবে আর কখন দেওয়া হবে প্লেটলেট, তা নিয়ে নজরদারির বালাই নেই বহু বেসরকারি হাসপাতালে৷ ফলে বহু রোগীর ক্ষেত্রে অতি-চিকিৎসায় হিতে বিপরীত হচ্ছে৷ স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, ডেঙ্গির প্রোটোকল শিকেয় তুলে চিকিৎসা হচ্ছে অনেক জায়গায়৷ এর নেপথ্যে কিছু ডাক্তারের পরিমিতিবোধের অভাবও দেখছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা৷

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীও মানছেন পরিস্থিতির কথা। ডেঙ্গির সিংহভাগ মৃত্যু ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোমের জেরে হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে ফ্লুইড ওভারলোড এবং প্লেটলেট দেওয়ার সমস্যাকে কাঠগড়ায় তুলছেন তিনিও। বেসরকারি মতে যে প্রায় ৯০ জন চলতি মরসুমে ডেঙ্গির বলি হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একাধিক রোগী শক সিন্ড্রোমে মারা যাননি, তাঁদের মৃত্যু হয়েছে নানা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বিকল হয়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর নেপথ্যে থাকতে পারে স্যালাইন ও প্লেটলেট সংক্রান্ত প্রোটোকল নিয়ে বেসরকারি চিকিৎসকদের একাংশের অবহেলা।

Dengue Death In West Bengal: একদিনে ডেঙ্গির বলি ২ শিশু, আতঙ্কের গ্রাসে বাংলা
সিদ্ধার্থর কথায়, “সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গির যা চিকিৎসা-বিধি বা প্রোটোকল, সেটাই মানা হয়৷ কিন্তু অনেক বেসরকারি হাসপাতালেই তা যথাযথ মানা হয় না। বিশেষ করে জেলাস্তরের ছোট বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে। আর তাতেই বিপত্তি হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।” তিনি জানান, বিপদ কাটিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠা কিছু রোগীর ক্ষেত্রেও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি স্যালাইন দেওয়ায় একদিকে যেমন তাঁদের হার্ট ফেলিয়োর, ফুসফুসে জল জমার মতো ঘটনা দেখা যাচ্ছে, তেমনই অপ্রয়োজনে প্লেটলেট দেওয়ার জেরে রক্তবাহিকায় রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে সঙ্কটজনক হয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি। তিনি জানান, সব ক’টি মৃত্যুর কার্যকারণ খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য দপ্তর। সেইমতো সতর্কও করা হচ্ছে চিকিৎসকদের।

স্বাস্থ্য দপ্তরের ডেঙ্গি নজরদারি দলের সদস্যরা জানাচ্ছেন, নিয়ম অনুযায়ী, ডেঙ্গিতে জলশূন্যতা হলে এবং রক্ত ঘন হয়ে উঠলে ঘণ্টায় ১০ মিলিলিটার ফ্লুইড চালানোর কথা। দিনে অন্তত একবার রক্তের প্যাক্ট সেল ভল্যুম (পিসিভি) পরখ করে দেখা দরকার। সেই অনুযায়ী ফ্লুইড চালানো, বাড়ানো, কমানো বা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। না-হলে, ফ্লুইড ওভারলোডের কারণে ফুসফুসের ভিতর জল জমে গিয়ে প্রাণঘাতী শ্বাসকষ্ট হতে পারে৷ আবার দুর্বল হৃদপেশির কারণে অতিরিক্ত ফ্লুইড পাম্প করতে না-পেরে হার্ট ফেলিয়োর হয়ে মৃত্যু ঘটাও বিরল নয়৷

Peerless Hospital : স্টেম সেল থেরাপিতে বাঁচল প্রৌঢে়র পা, নজির রাজ্যে
ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, “ডেঙ্গি রোগীকে প্লেটলেট দেওয়ার তিনটি পূর্বশর্ত রয়েছে৷ প্লেটলেট কাউন্ট ৫০ হাজারের কম এবং সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হলে প্লেটলেট দিতে হয়৷ যদি প্লেটলেট কাউন্ট ২০ হাজারের কম হয়ে যায় এবং সঙ্গে সেই সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যা থাকে তখনও প্লেটলেট দিতে হয়৷ আর কোনও সমস্যা না-থাকলেও প্লেটলেট কাউন্ট যদি ১০ হাজারের কম হয়ে যায়, তখনও প্লেটলেট দিতে হয়৷ এর অন্যথা হলেই হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা ষোলো আনা৷”

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, দরকার ছাড়া প্লেটলেট দিলে কাউন্ট বাড়ার বদলে উল্টে কমে যেতে পারে৷ এমনকী, এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ফুসফুসও৷ প্রবল জ্বর আর খিঁচুনি হয়ে প্রাণঘাতী পরিস্থিতিও তৈরি হয়ে যেতে পারে৷



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *