স্বাস্থ্য দপ্তরের সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতা, বিধাননগর, হাওড়া, ব্যারাকপুর, হুগলি এবং আসানসোলে বাতাসে দূষণ বাড়ার কারণে ষাটোর্ধ্বদের ৫৫ শতাংশই ভুগছেন কাশি ও শ্বাসকষ্টে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, দূষণজনিত অসুস্থতায় রাশ টানতে ওই ছ’টি এলাকার স্থানীয় প্রশাসনকে কিছু পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন।
বায়ুদূষণের জেরে সবচেয়ে বেশি সমস্যা শিশু ও ষাটোর্ধ্বদের। বাতাসে লাগাতার দূষণ বৃদ্ধির কারণে কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে, তা জানতে মাস নয়েক আগে একটি সমীক্ষা শুরু করে স্বাস্থ্য দপ্তর। সরকারি সূত্রে খবর, দেখা গিয়েছে, কলকাতা, বিধাননগর, হাওড়া, ব্যারাকপুর, হুগলি এবং আসানসোলে বাতাসে দূষণ বাড়ার কারণে ষাটোর্ধ্বদের ৫৫ শতাংশই ভুগছেন কাশি ও শ্বাসকষ্টে। চোখ শুকিয়ে যাওয়া এবং চোখ দিয়ে জল পড়ার শিকার ৩৩ শতাংশ শিশু। পরিবেশ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার অবশ্য দাবি, ‘অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় বাংলায় দূষণ-মাত্রা নিয়ন্ত্রণেই। শীতকালে যাতে দূষণ না বাড়ে, সে জন্য নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’
দূষণে কী ধরনের রোগ বাড়ছে, তা জানার জন্য রাজ্যের ছ’টি হাসপাতালকে চিহ্নিত করেছিল স্বাস্থ্য দপ্তর। এর মধ্যে কলকাতার দু’টি, হাওড়া, আসানসোল, ব্যারাকপুর এবং হুগলির একটি করে হাসপাতাল রয়েছে। দ্য ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হিউমান হেলথ (এনপিসিসিএইচএইচ) প্রকল্পে স্বাস্থ্য দপ্তরের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু হওয়া সমীক্ষাটি। যার লক্ষ্য – ওই হাসপাতালগুলিতে যে রোগীরা যান, তাঁদের মধ্যে দূষণের কারণে কারা নিয়মিত অসুস্থ হচ্ছেন, সেই ডেটাবেস তৈরি।গত তিন মাসে সমীক্ষার আওতায় এসেছেন ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ। পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বার শহরের তাপমাত্রা এখনও তেমন না কমলেও বাতাসে দূষণের সূচক ৩০০ পেরিয়ে যাচ্ছে। শীত বাড়লে সূচক আরও বাড়বে। এর প্রধাণ কারণ কার্বণের মাত্রা বৃদ্ধি।’ দূষণ সূচক ১৫০ পেরোলেই ফুসফুসের সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট-সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ রাজা ধর বলেন, ‘বায়ুদূষণের সংস্পর্শে থাকা নাগরিকদের বড় অংশই শ্বাসকষ্টের শিকার। এ ছাড়া দূষণের কারণে নাকের সমস্যা, কাশি ও বুকে অস্বস্তি হয় অনেকেরই। এই উপসর্গগুলি হাঁপানির পূর্বাভাস দেয়।’ তিনি জানান, বায়ুদূষণ অ্যালার্জি বাড়িয়ে তোলে। এই পরিস্থিতিতে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ জরুরি বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, দূষণজনিত অসুস্থতায় রাশ টানতে ওই ছ’টি এলাকার স্থানীয় প্রশাসনকে কিছু পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। স্বাস্থ্যভবনের তরফেও দূষণ মোকাবিলায় স্কুল থেকে শুরু করে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রচার চলছে। প্রতি ব্লকের তিনটি করে স্কুলকে বেছে নেওয়া হয়েছে প্রচারের জন্য। কী থেকে দূষণ ছড়ায়, তা-ই মূলত তুলে ধরা হচ্ছে। দূষণ মোকাবিলায় কী করণীয়, সেই বার্তা সংবলিত হোর্ডিংও দেওয়া হবে হাসপাতালগুলিতে।