বিধানসভা এবং লোকসভার বাইরে এই প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে চলেছেন নিউ টাউনের ৫ হাজারের বেশি বাসিন্দা। ফলে, জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া (২) নম্বর পঞ্চায়েতের ৮টি আসনের প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ভর করবে স্মার্ট শহরের বাসিন্দাদের ভোটের উপর। স্বাভাবিক ভাবেই নিউ টাউনের একটি বড় অংশ পঞ্চায়েতের মধ্যে ঢুকে পড়ায় ক্ষোভ দানা বেঁধেছে বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, নয়া উপনগরীর পথ চলা শুরুর পর থেকেই যাবতীয় পরিষেবা প্রদান করে থাকে নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ(এনকেডিএ)। এবার কি তাতে ছেদ পড়তে চলেছে? পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যদিও বলছেন, ‘পুনর্বিন্যাসের পরে নিউ টাউনে বুথের সংখ্যা বাড়লেও পরিষেবা প্রদান এনকেডিএর হাতেই থাকবে।’
সম্প্রতি সরকারি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে এসেছে। ওই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক, নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া ১সি, ১ডি, ১এ (উত্তর ভাগ), ২বি, ২ই, ১বি, ২ এলাকাকে পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। নিউ টাউনের বাসিন্দা অবিনাশ চৌধুরী বলছেন, ‘পঞ্চায়েতের পুরকর থেকে শুরু করে যাবতীয় আইনের সঙ্গে এনকেডিএর কোনও মিল নেই। তাছাড়া, এনকেডিএ যেভাবে পরিষেবা দিচ্ছে তা কোনওভাবেই পঞ্চায়েতের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।’ রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আফতাবউদ্দিন অবশ্য বলছেন,’পঞ্চায়েতের আওতায় এলাকা গেলেও যাবতীয় পরিষেবা প্রদান এনকেডিএ করবে। তবে এলাকার মানুষের এতে সুবিধেই হবে। কারণ জনপ্রতিনিধিরা সব সময়েই এলাকার স্বার্থে কাজ করেন।’
আফতাবউদ্দিনের সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন নিউ টাউন সিটিজেন্স ওয়েলফেয়ার কমিটির সম্পাদক সমীর গুপ্ত। তিনি বলছেন, ‘পঞ্চায়েতে ভোট দিতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কারণ, একজন জনপ্রতিনিধির কাছে খুব সহজেই যে কোনও দাবিদাওয়া নিয়ে যাওয়া যায়। তবে যাবতীয় পরিষেবা দেওয়ার ক্ষমতা এনকেডিএর হাতেই থাকুক সেটাই চাইব।’ কেন নিউ টাউনের বড় অংশকে পঞ্চায়েতের আওতাভুক্ত করা হচ্ছে? শেষ বিধানসভা নির্বাচনে রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভা কেন্দ্রে ৫৬ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হলেও মূল নিউ টাউন অর্থাৎ নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ (এনকেডিএ) এলাকায় বিজেপির তুলনায় ৭৯৮টি ভোট কম পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এমনকী, এই এলাকায় ১০২০০ জন ভোটার হলেও ৬২০০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন বিধানসভা নির্বাচনে। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, এই অঞ্চলে রাস্তা-আলো ঝাঁ চকচকে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, সম্পত্তিকর কলকাতা, সল্টলেকের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
একইসঙ্গে সরকারি স্কুল, হাসপাতাল, শ্মশান, পর্যাপ্ত খেলার মাঠ কিছুই সেভাবে নেই। রাত আটটা বাজলেই মেলে না যানবাহনও। এই বিষয়গুলির কারণেই শাসকদলের থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কোনও এলাকাকে পুরসভা করতে হলে নির্দিষ্ট সংখ্যক বাসিন্দার প্রয়োজন হয়। যা আপাতত নিউ টাউনে নেই। সে-কারণেই পঞ্চায়েত সদস্যদের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতেই নয়া উপনগরীর একাধিক ব্লককে পঞ্চায়েতের আওতায় ঢোকানো হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর।