Bardhaman News : সমস্যার পেরিয়ে ডিঙিয়ে পড়তে চায় একরত্তি যাযাবর – bardhaman child wants to go school his life struggles


রূপক মজুমদার, বর্ধমান
৯ বছরের শিশুর মেধা বিস্মিত করেছিল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তার উপর যখন জানা গেল, শিশুটি একটি যাযাবর সম্প্রদায়ের সন্তান এবং তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করে রোজগারে বাধ্য করছে পরিবার, তখন বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। সব শুনে শুক্রবার সকালে রায়না তৃতীয় চক্রের সার্কল ইনস্পেক্টর (স্কুল) শিশুটিকে নিয়ে আনেন রায়না ২-এর বিডিওর কাছে। এতটুকু ঘাবড়ে না গিয়ে শিশুটি সেখানে জানায়, ‘আমি শুধু পড়তে চাই। আমার ঠাকুমা আমাকে পড়তে দিচ্ছে না। আমাকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে।’ শিশুটির পরনে বিশ্ব বাংলার লোগো দেওয়া সাদা জামা। বিডিও অনিশা যশ শিশুটিকে পাশে বসিয়ে পুরো বৃত্তান্ত শোনেন। পুরো কাহিনি শুনে আর পড়ার প্রতি জেদ দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, শিশুটিকে আপাতত সরকারি তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। তার হাতে তুলে দেন উপহার। নিয়মিত পড়তে পারবে জেনে আনন্দে শিশুটি প্রণাম করে বিডিওকে।

Purba Bardhaman News : হজমোলা ভেবে কীটনাশক! বর্ধমানে মর্মান্তিক পরিণতি স্কুল পড়ুয়ার
রায়না থানা এলাকায় শিশুটি থাকে তার ঠাকুমার কাছে। শিশুটি জানিয়েছে, তার উপর দীর্ঘ দিন ধরে নির্যাতন চালিয়ে আসছে তার ঠাকুমা। মদ খেয়ে মারধর করা, মাঝে মধ্যে শিকলে বেঁধে রাখা, অত্যাচারের তালিকায় বাদ নেই কিছুই। ঠাকুমার একটাই লক্ষ্য, দিনভর ভিক্ষা করে রোজগার করে আনতে হবে শিশুটিকে। কিন্তু তারই মাঝে যে ক’দিন স্কুলে যেতে পেরেছে তাতেই মেধা, খেলাধুলোয় প্রতিভার ছাপ রেখেছে খুদে ওই ছাত্র। যা দেখে মুগ্ধ শিক্ষক, শিক্ষিকারা। তাঁদেরই কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন রায়না তৃতীয় চক্রের সার্কল ইনস্পেক্টর (স্কুল) দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘একটি ছেলে পড়তে চায়, খেলতে চায়। আর সেখানে তার বাড়ির লোক বাধা তৈরি করবে, এটা হতে পারে না। সব জানার পর আমি বিডিও ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনিই গাড়ি পাঠিয়ে ছেলেটিকে নিয়ে এসেছেন। ছেলেটিকে আমরা সমাজে ফিরিয়ে আনার সবরকম চেষ্টা করব।’

Malda News: গবেষণার জন্য বিদেশে পাড়ি মালদার স্বর্ণায়ুর, সাফল্য নিয়ে মুখ খুললেন তরুণ
ছেলেটিকে দেখে একপ্রকার রোখ চেপে গিয়েছে বিডিওরও। রায়না ২-এর বিডিও অনিশা যশ বলেন, ‘আমরা সব খোঁজ নিয়ে নিয়েছি। ছেলেটির বাবা-মা থাকে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। এখানে ঠাকুমার কাছে ও থাকছিল। ঠাকুমা টাকা রোজগারের জন্য ওর উপর চাপ দিচ্ছিল। ভিক্ষা করে ওকে টাকা আনতে হবে, না হলেই মার, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা। এ সবই আমরা ছেলেটির মুখ থেকে শুনেছি।’ আপাতত ছেলেটির বিষয়ে স্থানীয় এক জনের সঙ্গে কথা বলেছেন বিডিও। বলেন, ‘উনি ছেলেটিকে সন্তান স্নেহে রাখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। আমরাও নজরে রাখব। ছেলেটি এই বয়সেই পড়শোনা, খেলাধুলো সবেতেই প্রতিভার নজির রেখেছে। ঠিকমতো ওকে পরিচালিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এই লড়াইয়ে আমরা বহু মানুষের সাহায্য পাব। আইনের দিকটি নিয়েও আমরা ভাবছি।’ ইতিমধ্যে ছেলেটির বাবা-মায়ের বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কাছে খোঁজখবর নিয়েছেন বিডিও। প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের কোটায় একটি মিশন স্কুলে ছাত্রটিকে ভর্তি করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিডিওর সঙ্গে চেষ্টা শুরু করেছেন মহকুমাশাসক কৃষ্ণেন্দু মণ্ডলও। প্রায় চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা করতে চাওয়া একটি ছেলেকে তার পরিবারের লোকেরা বাধা দেবে, এটা কোনও আইনে হতে পারে না। আমরা সবাই মিলে ছেলেটির জন্য চেষ্টা করব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *