জমি-বিতর্কের মাঝেই বসতবাড়ির জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি বোলপুরে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরে আবেদন করা হয় অধ্যাপক সেনের তরফে। অমর্ত্য সেনের এই বাড়ির জমি দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর বাবা আশুতোষ সেনের নামে লিজ় হিসাবে রয়েছে। ২০০৬ সালে বাবার নামে থাকা লিজ় অমর্ত্য সেনের নামে আসে।
তাই আশুতোষ সেনের পরিবর্তে জমির নথিতে ‘মন্তব্য’-এর ঘরে যাতে অমর্ত্য সেনের নাম উল্লিখিত হয়, তার জন্য আবেদন করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাঁর আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, ‘উনি বাড়ির জমির রেকর্ডের সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। ওই জমির মালিক বিশ্বভারতী।
ওরা আশুতোষ সেনকে লিজ দিয়েছিল। তাই জমির রেকর্ডে ‘মন্তব্য’-এর ঘরে এতদিন আশুতোষবাবুর নাম ছিল। ওই জায়গায় অমর্ত্য সেনের নামটা রেকর্ড করানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।’
অমর্ত্য সেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বোলপুর বিএলএলআরও অফিস থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি বিএলএলআরও অফিসে জমির নথিপত্র নিয়ে হাজির হতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এই নোটিশ হাতে পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে বিশ্বভারতী প্রশাসন।
এর পাল্টা ১৭ ফেব্রুয়ারি বোলপুর বিএলএলআরও অফিসে চিঠি দেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর এস্টেট অফিসের লেখা চিঠিতে সুকৌশলে মুখ্যমন্ত্রী পদ বা নাম উল্লেখ না করে, লেখা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী গত ৩০ জানুয়ারি অমর্ত্য সেনের বাসভবনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে গিয়ে তিনি লাইভ অডিয়ো ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার সামনে অমর্ত্য সেনের কাছে কিছু আসল নথি হস্তান্তর করেছিলেন।
যা মৌজা সুরুল (১০৪)-এর এলআর প্লট নং ১৯০০/২৪৮৭-এর উপর শ্রী সেনের দখল / দখল / বা মালিকানা ইত্যাদি সম্পর্কিত। চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, উক্ত জমির দখল নিয়ে অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বভারতীর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। যেহেতু মৌজা সুরুল (১০৪) এর ২৭০ নং খতিয়ানে উল্লিখিত এলআর প্লটের মালিক বিশ্বভারতী, তাই চিঠিতে কর্তৃপক্ষের আবেদন, গত ৩০ জানুয়ারি রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের মন্ত্রী অমর্ত্য সেনকে যে সব নথি হস্তান্তর করেছেন, সেগুলির কপি তাঁদের সরবরাহ করা হোক।
এখন দেখার, ওই জমির নথি বিএলএলআরও এবং বীরভূম জেলা প্রশাসন আদৌ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয় কি না। এই সম্পর্কে বীরভূমের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অসীম পাল রবিবার বলেন, ‘বিশ্বভারতীর চিঠি এসেছে। ২০ তারিখ শুনানির বিষয়টি দেখা হবে।’
জমির নথির কপি যদি না দেওয়া হয়, তা হলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপই বা কী হবে, তা নিয়েও জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে। কারণ, চিঠিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শুনানির আগেই নথি হাতে চেয়েছেন। তবে এ নিয়ে মুখে কুলুপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই নিয়ে এখুনি কোনও মন্তব্য করব না।’
এ দিকে, অমর্ত্য সেনের হয়ে শুনানিতে উপস্থিত থাকার কথা তাঁর আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তীর। বিশ্বভারতীর নথি চাওয়া নিয়ে তিনি অবশ্য বিএলএলআরও-র উপরে দায় ছেড়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বভারতী কী চেয়ে চিঠি দিয়েছে, আমার জানা নেই। তবে নথি দেওয়ার বিষয়টি বিএলএলআরও-র উপর নির্ভর করছে।’