নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন গত বছরের ২২ জুলাই, গভীর রাতে। তারপর কেটে গিয়েছে সাত মাস। জেল থেকে ছাড়া পাননি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু জেলবন্দি থেকেও এতদিন তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ স্বশাসিত ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান আইআইএসডব্লিউবিএমের প্রেসিডেন্ট পদে থেকে গিয়েছিলেন। অবশেষে শুক্রবার পদত্যাগ করলেন জেলবন্দি পার্থ।
প্রতিষ্ঠানের ভিতরে-বাইরে পার্থর অপসারণ চেয়ে প্রবল চাপ ছিল। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরাও চেয়েছিলেন পার্থকে সরিয়ে দেওয়া হোক। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন পদাধিকারবলে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোর্ড অফ গভর্নর্স-এর সভাপতি হন পার্থ। নিয়মিত না হলেও নানা সময়ে বোর্ডের বৈঠকে যোগ দিতেন।
গত ২২ জুলাই গ্রেপ্তারির পরেও ওই পদে থেকে গিয়েছিলেন তিনি। বাংলার কিংবদন্তী মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় যে প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অফ গভর্নর্স-এর প্রথম সভাপতি ছিলেন, সেই পদে একজন জেলবন্দি অভিযুক্ত কী ভাবে থাকতে পারেন, সেই প্রশ্নে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক এবং কর্মীদের মধ্যে। প্রসঙ্গত, এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।
এমনই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে গত কয়েক মাস ধরে পার্থকে সরাতে চেয়ে কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। প্রতিষ্ঠান সূত্রে খবর, নানা সময়ে এই ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে আসা নিয়োগ সংস্থার অনেকে এ ব্যাপারে বিষ্ময় প্রকাশ করেছিলেন। অধ্যাপক-কর্মীদের চাপের পরে রাজ্য সরকার এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও চেয়েছিলেন পার্থকে সরিয়ে দেওয়া হোক।
কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়া চলছিল ঢিমেতালে। শুক্রবার বোর্ড অফ গভর্নর্স-এর বৈঠকে পার্থর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই পদত্যাগপত্র কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছে কিছুদিন আগেই। দীপঙ্কর দাশগুপ্ত এ ব্যাপারে বলেন, ‘পার্থবাবু আগেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন।
এখন মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব।’ বোর্ড অফ গভর্নর্স-এর সদস্য এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই পার্থবাবুকে নিয়ে টালবাহানা চলছিল। এ দিন ওঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় সভাপতি হিসেবে অনেকের নাম নিয়েই আলোচনা হয়েছে। হয়তো বিশ্বভারতীর কোনও প্রাক্তন উপাচার্যকে এই পদে আনা হতে পারে।’
জেলবন্দি পার্থ কীভাবে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠালেন, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। একটি সূত্রের দাবি, কিছুদিন আগে আইনজীবী মারফত পার্থ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মেলেনি।